স্বাস্থ্য সেবায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মানসম্মত চিকিৎসা, আধুনিক সরঞ্জাম, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও আন্তরিক সেবার সমন্বয়ে এই হাসপাতাল এখন অনেকের কাছেই একটি ‘মডেল স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুরে বাস করে অন্তত সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯৬৪ সালে মোহনপুর মৌজায় মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে যাত্রা শুরু করে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমানে ৪ একরেরও বেশি আয়তনের এই হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার সুবিধা রয়েছে। এখানে ১৭ জন চিকিৎসক ও ২৮ জন নার্স কর্মরত আছেন।
হাসপাতালে এনসিডি কর্নার, মানসিক রোগীদের জন্য ‘মনের বাড়ি’, আইএমআইসি, ইপিআই এবং স্বাস্থ্য ও শিশুশিক্ষা কর্নার চালু রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি সেবা, ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও প্যাথলজি পরীক্ষার সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৪৫ জন প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি এবং ১৫-২০ জনের সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন ও ইনহেলারসহ শতাধিক ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।
পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ফুলে-ফলে সজ্জিত আঙিনা, মাল্টিপারপাস হলরুম, মসজিদ, রোগী ও স্বজনদের বিশ্রামাগার, গ্যারেজ ও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কীট ব্যবহার করা হচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে।
কাশিপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ইনতাজ আলী বলেন, “ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিচ্ছি এখানে। বই করে দিয়েছে, নিয়মিত ডাক্তার দেখায়, ওষুধ পাই। আমি খুব খুশি।”
আগরহাটির আমেনা খাতুন বলেন, “তিন দিন হলো মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। নার্স আর ডাক্তাররা নিয়মিত খোঁজখবর নেয়, ওষুধ দেয়। মেয়েটা অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।”
বিজয়রামপুর গ্রামের বাবু পাটোয়ারী বলেন, “ছেলেটার ডেঙ্গু হয়েছিল। হাসপাতাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে খুব ভালোভাবে চিকিৎসা দিয়েছে। সেবার মানে আমরা সন্তুষ্ট।”
স্টাফ নার্স হাওয়া বেগম বলেন, “মানুষের সেবা করার মানসিকতা নিয়েই এই পেশায় এসেছি। রোগীদের আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।”
সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আনিসুজ্জামান জানান, “আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এখন প্রায় সব ধরনের পরীক্ষাই হাসপাতালেই করা যায়। ইউজার ফি বাবদ সরকারি কোষাগারে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব জমা হচ্ছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালটির সুনাম বাড়ার পেছনে রয়েছে চৌকস চিকিৎসক টিমের নিবেদিত কাজ। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু বলেন, “প্রতিদিন আউটডোরে ৫-৬ শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসছেন। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও নান্দনিক পরিবেশ রোগীদের আস্থা বাড়িয়েছে।” চিকিৎসা কার্যক্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল।
ডাঃ ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, “মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সত্যিকারের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ জরুরি। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ পূরণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আধুনিক হাসপাতাল ভবন ও ডিজিটাল সরঞ্জাম নিশ্চিত করা গেলে এ হাসপাতাল দেশের অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর জন্য অনুসরণীয় হয়ে উঠতে পারে।”
নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশের উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। উন্নত সেবা, আধুনিক সরঞ্জাম, দক্ষ জনবল ও মানবিক আচরণ—সবকিছু মিলে এ হাসপাতালকে একটি কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা মডেলে রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
Development by: webnewsdesign.com