শীত উপেক্ষা করে জৈন্তার লাল শাপলার রাজ্যে পর্যটকদের ভীড়

বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২০ | ৪:৩২ অপরাহ্ণ

শীত উপেক্ষা করে জৈন্তার লাল শাপলার রাজ্যে পর্যটকদের ভীড়
apps

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি
সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পান-পানি-নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা। আর এ উপজেলায় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। সৌন্দর্য্যরে লীলা ভূমি মেঘালয় পাহড়ের পাদদেশ ঘেরা ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর লাল শাপলার বিল নামে পরিচিতি লাভ করে। ৪টি বিলে প্রায় ৯শত একর ভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে লাল শাপলার জন্ম। বিল গুলো হল ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাটা ও কেন্দ্রী বিল। শীতের আগমণের সাথে সাথে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে তুলে লাল শাপলার বিল সমূহ। যেন ফুলে ফুলে সাজানো ‌‘আসমান জমিনে লাল গালিচায় বিছানো চাদর’।

পৌরণিক ইতিহাস থেকে জানা যায়- ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারত বর্ষের অধিকাংশ এলাকায় যখন মোগল রাজ্যভূক্ত ছিলো, তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫বছর পর্যন্ত স্বাধীন রাজ্য হিসাবে পরিচালিত হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ মহাভারত ও রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য রয়েছে।
১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ রাজা বিজয় সিংহের শাসনামলে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল, বর্তমানেও রয়েছে। রাজা বিজয় সিংহ ১৭৭৮সালে সারিঘাট ঢুপি গ্রাামে রামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্দি করে মূল্যবান সম্পদ লুট করে নেয়। আর ডিবির হাওড় রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধী স্থলেই লাল শাপলার বিলগুলো অবস্থিত আর বিলের পাড়ে বিজয় সিংহ‘র সমাধি স্থল।

সূর্যদয়ের সাথে সাথে বেলা ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য্য দৃশ্যমান থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শাপলাগুলো নিশ্চুপ নীরব হয়ে যায়। লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল ডিবির হাওড় আশ-পাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ঘন কোয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল জেলা ও উপজেলা থেকে দল বেধে ছুটে আসে অগনিত পর্যটক। বিলের লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল যেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। রয়েছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আর পাখ-পাখালির কিচির মিচির সুর, যেন মনে হয় প্রকৃতি নিজে বাধ্য যন্ত্রের ধারা সুরের ঝর্ণা ধারা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

ডিবির হাওড় এর বিল গুলো বিগত ২০১৪ সনে স্থানীয় জাতিয় ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে বিল গুলো পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করলে সম্প্রতি কিছু অসাধু ভূমি খেকুুচক্র কুদৃষ্টি পড়ে লাল শাপলার বিলগুলোর জেগে উঠা জমির দিকে। চক্রটি বিভিন্ন ভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৪টি বিলের মধ্যে হরফকাটা বিলটি সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দিয়েছে।
মহিষ নামিয়ে শাপলা ফুল ধ্বংস করে দেওয়া, শাপলার মূল উত্তোলন করে দেওয়ার ফলে বিলে শাপলা গাছ থাকলেও ফুল শূন্য হয়ে পড়েছে। ভূমি খেকু চক্ররা ইতোমধ্যে প্রভাবশালী চক্র ভূল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে বিলের প্রায় ২শত বিঘা জমির পানি শুকিয়ে মাছ লুট করে এবং অসময়ে বিলের পানি শুকিয়ে শাপলার মূল ধ্বংস করার কারণে কেন্দ্রী বিলের সৌন্দর্য্যতা নষ্ট করে দিয়েছে।
অপরদিকে স্থানীয় সামাজিক সংঘটন ও প্রকৃতি প্রেমীরা দাবী তুলেন বাংলাদেশেরর বৃহত্তম হাওড়ের মধ্যে অন্যতম ডিবির হাওড়, হরফকাটা, ইয়াম বিল ও কেন্দ্রী বিল। বিল গুলো সমুহের শ্রেণী পরিবর্তন করে বন্দোবস্তে নেওয়ার অপচেষ্টা এবং বাঁধ নির্মাণ বন্দ করার দাবী জানান। বিলগুলো রক্ষার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সিলেটে মানববন্ধন পালন করে। লাল শাপলা বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ও জৈন্তিয়া পর্যটন উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কমিটি লাল শাপলা বিল গুলোর প্রকৃত এরিয়া চিহ্নত করে বিলের বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।
পর্যটকদের মতে সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, মায়াবন, পান্থুমাই, মায়াবতী ঝর্ণা, বল্লা ঘাটের জমিদার বাড়ী, লালাখাল, শ্রীপুর চা-বাগান, জাফলং চা বাগান, দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে ডিবির হাওড়ের লাল শাপলার ৪টি বিলও পর্যটকদের কাছে শীর্ষ স্থান দখল করে নিচ্ছে।

লাল শাপলার বিলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা জানান, লাল শাপলার বিলের পরিবেশ অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর। স্বাধীন জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধি স্থল, বিলের চার পাশে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য বিলটিকে আরো আর্কষণীয় করে তুলেছে। ফলে ভ্রমন পিপাসু ও পর্যটক প্রেমীদের আকর্ষিত করে।
তারা আরোও জানান, সরকার যদি লাল শাপলার বিল গুলো প্রকৃত এরিয়া চিহ্নিত করে সংরক্ষনের জন্য বাঁধ নির্মাণ করে তাহলে শাপলা গুলো সারা বৎসর বেঁচে থাকবে।

Development by: webnewsdesign.com