কোরবানির পশুতে আকিকার মাসআলা

বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

কোরবানির পশুতে আকিকার মাসআলা
apps

ঈদুল আজহার অবিচ্ছেদ্য অংশ কোরবানি। আর কোরবানির অবিচ্ছেদ্য অংশ সুস্থ-সবল পশু। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার ইবাদতের জন্য এই পশু জবাই করার নামই কোরবানি, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব। তবে কেউ কেউ কোরবানির পশুতে নিজেদের সন্তানের আকিকার অংশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এভাবে আকিকার অংশ দেওয়া জায়েজ কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।

হাদিসে এসেছে, কোরবানির পশুর অংশে সন্তানের আকিকা দেওয়া যায়। কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া যাবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬)

কোরবানির পশুতে আকিকার দুটি মাসআলা

শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনান : ১৭/১২৬)

ফাতাওয়া শামিসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সঙ্গে আকিকা শুদ্ধ। (রাদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)

কোন পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে?

প্রসঙ্গত, জেনে রাখা উচিত যে, কোরবানির কোন পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে। তাহলে কাউকে শরিক করতে চাইলে বিষয়টি সহজ হয়ে আসবে।

প্রথমত, কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৭)

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন: দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ি: ৪/২০৭)

কোনো অংশীদারের নিয়ত গলদ হলে

অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি তাকে কেউ অংশীদার বানালে, তাদের (অংশীদারদের) কোরবানিও শুদ্ধ হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৮; কাজিখান : ৩/৩৪৯)

আকিকা কখন ও কীভাবে দিতে হয়?

সন্তান জন্মের পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে জন্মের সপ্তম দিনে পশু জবাই করাকে আকিকা বলে। আকিকা করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে আকিকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-কে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯৬১)

অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু জবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)

সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। এক হাদিসে সপ্তম দিনে আকিকা করার কথা বলা হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৫২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর আকিকা সপ্তম দিনে করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৮৩৪)

তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪তম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। তা-ও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)

অবশ্য একুশ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তী সময়েও তা আদায় করা যাবে। সন্তানের আকিকা করার দায়িত্ব তার পিতার। অবশ্য অন্য কেউ বা নিজেও নিজের আকিকা করা জায়েজ আছে।আকিকার গোশত সন্তানের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন সবাই খেতে পারবে।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)।

Development by: webnewsdesign.com