ভিনদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন অনেক দেশত্যাগী। হতে পারে সেটি অভিবাসনের আবেদন কিংবা কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা। আন্তর্জাতিক আইনেও রয়েছে এর যথাযথ বিধান। তবে কেউ সেটি পায়, কেউবা পায় না। এ ক্ষেত্রে কোনো একজনের আশ্রয় লাভের আলোচনার চেয়ে না পাওয়ার সমালোচনাই বেশি চাউর হয়। ইউরোপের দেশ ইংল্যান্ডেও ঘটেছে এমন একটি ঘটনা। যা কি না লম্বা একটি সময় পার ও তাৎপর্য বিবেচনায় স্বাতন্ত্র গুরুত্ব বহন করে।

সানি নামে একজন আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় আশ্রয় লাভের আবেদনে ব্যর্থ হয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের সড়কে সড়কে। তাও আবার বাসে চড়ে। রাতের বেলায় লন্ডনের আঁকাবাঁকা সড়কে কাটিয়েছেন জীবনের ২১টি বছর।

গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে নাইজেরিয়ায় কারাবন্দি হন সানি। কংক্রিটের চার দেয়ালে আটকা পড়ে তার স্বপ্নগুলো। চোখেমুখে তখন শুধুই মুক্তির তীব্র আকাক্সক্ষা। একপর্যায়ে সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে এমন একটি ভবঘুরে জীবনকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। কারাবন্দি হয়ে মুত্যুদণ্ড পাওয়ার প্রহর গোনার চেয়ে যাযাবর জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

সানির যাযাবর জীবনের শুরুর পর্যায়ে লন্ডন শহরের একটি গির্জার এক নারী যাজকের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। প্রথম দিকে বাসের একাধিক রাতের ভাড়া বাঁচানোর জন্য সানিকে প্রথমে একটি মাসিক পাস কিনে দিয়েছিলেন ওই নারী। এরপর থেকে এভাবেই মাসের পর মাস কাটিয়েছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে যাযাবর জীবনে খানিকটা হলেও স্বস্তির দেখা পেয়েছিলেন তিনি।

দিনের বেলা শহরের অভিজাত গির্জাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতেন সানি। এর সুবাধে রাজকীয় সব অনুষ্ঠানেও যোগদানের সুযোগ হয়ে ওঠে তার। এভাবেই পুরো লন্ডন শহরটাই তার কাছে আপন মনে হতে থাকে। আর ঠিক এরকম করেই তিনি তার যাযাবর জীবনের জ¦ালা-যন্ত্রণা ভুলতে পেরেছিলেন।

প্রথম প্রথম বাসে চড়ে রাত কাটানোর এ কৌশলটি রপ্ত করতে কিছুটা সময় লেগেছিল সানির। এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ঝগড়াও করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু কিন্তু ধীরে ধীরে কৌশল অবলম্বন করা রপ্ত করেছিলেন কঠোর সংযমী সানি। কারণ তিনি কখনই সংঘাত-সংঘর্ষ পছন্দ করতেন না। তাই মাথা ঠা-া রেখেই তিনি নানা ধরনের কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে রাতের বেলায় ঘুমানোর জন্য দ্বিতল বাসগুলোর নিচতলাকেই বেছে নিতেন।