নেক সন্তানের গুণাবলি হাদিসের বর্ণনায়

বৃহস্পতিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১:৪৯ অপরাহ্ণ

নেক সন্তানের গুণাবলি হাদিসের বর্ণনায়
apps

নেক সন্তান মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা দুনিয়ায় মা-বাবার চক্ষু শীতল করে, আখিরাতে তাদের কবর আলোকিত করতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। পৃথিবী যে সম্পদগুলো মৃত্যুর পরও মানুষের উপকারে আসে, তার মধ্যে নেক সন্তান অন্যতম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া (চলমান সদকা); (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৫১),

নিম্নে নেক সন্তানের কিছু গুণাগুণ তুলে ধরা হলো—,

জীবিত মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করে : নেক সন্তান মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করে, তাদের হক আদায়ে কোনো ত্রুটি রাখে না। কারণ এটা মহান আল্লাহর আদেশ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বোলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩),

অতএব মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ নেক সন্তানের অন্যতম গুণ।

মা-বাবার অনুগত হয় : নেক সন্তানের আরেকটি পরিচয় হলো, তারা মা-বাবার অনুগত হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমাল’ কোনটি? তিনি বলেন, সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তিনি আমাকে এ কথাগুলো বললেন, যদি আমি আরো প্রশ্ন করতাম তাহলে তিনি আরো অতিরিক্ত বিষয়ে বলতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫),

তবে তাঁরা যদি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কোনো কাজের আদেশ করেন, তবে তা মানা যাবে না ।,

মা-বাবার জন্য খরচ করা : মহান আল্লাহ সন্তানের উপার্জনে মা-বাবার হক রেখে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলো, ‘তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে, তা মা-বাবা, আত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। আর যেকোনো ভালো কাজ তোমরা করো, নিশ্চয় সে ব্যাপারে আল্লাহ সুপরিজ্ঞাত। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৫),

মা-বাবার জন্য দোয়া করা : মা-বাবার জন্য দোয়া করা সন্তানের দায়িত্ব, তাঁরা জীবিত হোক, কিংবা মৃত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মা-বাবার জন্য দোয়া করার শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৪)

তাঁদের পক্ষ থেকে নেক আমল করা : আবু রাজিন আল-উকায়লি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি হজ অথবা ওমরাহ করতে বা বাহনে উপবিষ্ট থাকতে অক্ষম। নবী (সা.) বলেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ আদায় করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯০৬),

তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা : নেক সন্তানের অন্যতম গুণ হলো মা-বাবা ও রক্তের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। পবিত্র মহান আল্লাহ রক্তের সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সতর্ক থাকো রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়দের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পর্যবেক্ষক।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১),

রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৮),

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুণগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

Development by: webnewsdesign.com