খালেদ বিন ইয়াজিদের অবদান স্বর্ণশিল্পে

বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ২:৩৩ অপরাহ্ণ

খালেদ বিন ইয়াজিদের অবদান স্বর্ণশিল্পে
apps

তাঁর পুরো নাম খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা ও রসায়ন শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ‘আল-হাকিম’ উপাধিতে তাঁকে ভূষিত করা হয়।

গ্রিক বিজ্ঞানের প্রতি খালিদের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।

উমাইয়া যুগের বিরল বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম গ্রিক বৈজ্ঞানিক গ্রন্থসমূহের অনেকগুলো আরবিতে অনুবাদ করেন। ফিহরিস্তের মতে, ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম অন্য ভাষা থেকে আরবিতে গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এ দৃষ্টিতে তাঁকে আরব প্রাকৃতিক বিজ্ঞান আলোচনার প্রবর্তক বলা যেতে পারে।

খালেদের রাসায়নিক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে আল রাজি, আবুল কাসেম প্রমুখ পরবর্তী সময়ে খ্যাত রসায়নবিদ তাঁদের রচনায় খালেদের নাম ও মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। খালেদের রচনার বিভিন্ন অংশ বিক্ষিপ্তভাবে যেটুকু পাওয়া যায়, তাতে তাঁর একই চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি চারটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন বলে ইবনে নাদিম ফিহরিস্তে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো, কিতাবুল হারারাত, সাহিফাতিল কবির, সাহিফাতুস সগীর এবং ওয়াসিয়াতিহি ইলা ইবনিহি ফিস সান আ। (বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, পৃ : ২৭)

তাঁর ব্যাপারে দাবি করা হয়, স্বর্ণ প্রস্তুতের ব্যাপারে তিনি নাকি স্পর্শমণি পর্যন্ত আবিষ্কারে সফল হয়েছিলেন। এই স্পর্শমণির সাহায্যে স্বর্ণ প্রস্তুত করা যেত।

এর আগে হজরত আলী (রা.) স্বর্ণ তৈরির একটি অভিনব পদ্ধতি বাতলে গেছেন। বিভিন্ন সূত্রে এ ব্যাপারে তাঁর একটি কাব্য বাণীও পাওয়া যায়। যার অনুবাদ হলো, পারদ ও অভ্র একত্র করে যদি বিদ্যুৎ ও বজ্রসদৃশ কোনো বস্তুর সঙ্গে সংমিশ্রণ করতে পার, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অধীশ্বর হতে পারবে। (বিজ্ঞানে মুসলমানের দান)

আধুনিক বিজ্ঞানের চরম বিকাশ যুগে মহাপরমাণুর ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন—এই তিন প্রকার পরমাণুর মধ্যে ‘প্রোটন’ পরমাণুকে সংশ্লেষণ করলে নাকি স্বর্ণে পরিণত করা যায়। কিন্তু এই স্বর্ণের প্রস্তুত মূল্য প্রচলিত স্বর্ণের চেয়ে এত অধিক হবে যে, এরূপ স্বর্ণ প্রস্তুত করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু লাভের প্রশ্ন বাদ দিলে স্বর্ণও মানুষের প্রস্তুতের আয়ত্তাধীন, এ কথা স্বীকার করতেই হয়। আলী (রা.) পারদ ও অভ্রকে বিদ্যুৎ বা বজ্রের মতো ভীষণ তেজস্কর অগ্নি সংশ্লেষাত্মক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার আভাস দিচ্ছেন। আবু আলী সীনাও স্বর্ণ প্রস্তুতে আলী (রা.)-এর মতো পারদকে অপরিহার্য ধরে নিয়ে অতিশয় বিশুদ্ধ গন্ধক ও পারদ জমিয়ে কঠিন করে স্বর্ণ প্রস্তুতের পদ্ধতি দিয়েছেন। গন্ধক ও পারদকে জমিয়ে কঠিন ও বিশুদ্ধ করতে গেলে বিদ্যুৎ বা বজ্রের মতো ভয়ংকর অগ্নি বিক্রিয়ার কথা না বললেও অনুধাবন করা খুব দুরূহ নয়। তাহলে আলী (রা.) আর ইবনে সিনার মতবাদের মধ্যে খুব তফাত থাকে না।

(বিশ্ব সভ্যতায় মুসলিম অবদান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) পৃ. ১৯)

Development by: webnewsdesign.com