তারা আর ‘সিনিয়র রয়্যাল’থাকতে চান না বলে জানিয়েছিলেন হ্যারি-মেগান। কিন্তু ব্রিটেনের রাজপরিবার যেভাবে তাদের সব ‘রাজ-দায়িত্ব’ থেকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ব্যথিত হ্যারি। রবিবার তিনি জানিয়েছেন, পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ভাবেননি তারা।
সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এই প্রথম ওই বিষয়ে মুখ খুলেছেন হ্যারি। সেবামূলক এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেছেন, জনতার অর্থ ছেড়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু তার কথায়, দুর্ভাগ্যবশত সেটা সম্ভব হলো না।
অনুষ্ঠানে অকপট হ্যারি বলেছেন, আমি চাই আমার কাছ থেকেই সত্যিটা আপনারা জানুন। রাজকুমার বা ডিউক অব সাসেক্স হিসেবে নয়। হ্যারি হিসেবে আমি যা বলব, সেটাই শুনুন।
আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থে কাজ করে একটি সংস্থা, হ্যারি তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেটিরই অনুষ্ঠানে গিয়ে হ্যারি বেশ আবেগতাড়িত বক্তব্য দেন। তাতে বলেন, কীভাবে মেগানের সঙ্গে তার ভালোবাসার শুরু। একসঙ্গে তারা কীভাবে সাধারণের কাজে নিয়োজিত হতে পারেন, ভেবেছেন তা-ও।
তার কথায়, ব্রিটেন আমার ঘরবাড়ি। এই দেশকে ভালোবাসি। সেটা কোনও দিন পাল্টাবে না। আপনাদের অনেকে পাশে ছিলেন, সেই সমর্থন নিয়ে বড় হয়ে উঠেছি। মেগানকে কীভাবে ভালোবেসে আপনারা আপন করে নিয়েছেন, দেখেছি। আপনারা দেখেছেন সারাজীবন যে ভালোবাসা আর সুখের খোঁজে ছিলাম, তা ওর মধ্যেই পেয়েছি। আপনারা এই কয়েক বছরে আমাকে ভালো করে চিনেছেন। তাই বুঝেছেন, যাকে আমি স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছি, তার মূল্যবোধও আমার মতোই।
হ্যারির সংযোজন, আমরা এ দেশের জন্য যা যা করার প্রয়োজন, গর্বের সঙ্গে করবো। বিয়ের পরে সেটা ভেবেই খুশি ছিলাম। মনে হয়েছিল আমরা মানুষের জন্য কিছু করবো। কিন্তু গোটা বিষয়টা এমন জায়গায় এসে ঠেকেছে, যে খারাপ লাগছে।
আপাতত বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে হ্যারিদের জন্য নির্দেশ, ‘হিস অ্যান্ড হার রয়্যাল হাইনেস’ (এইচআরএইচ)’ উপাধি ছেড়ে দেবেন তারা। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিনিধিত্বও করবেন না। হ্যারি সরে যাবেন সেনাবাহিনীর সাম্মানিক সব পদ থেকে। ফ্রগমোর কটেজের (লন্ডনে তাদের ঠিকানা) সংস্কারের যে অর্থ তারা ফেরাতে চেয়েছিলেন, তা-ও প্রয়োজন নেই বলে দেয়া হয়েছে। এই সব সিদ্ধান্তই এক বছর পরে পুনর্বিবেচনা হবে। আর এই সব সিদ্ধান্তেই ব্যথিত হ্যারি। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, তার ঠাকুরমা, ‘কমান্ডার ইন চিফের’ জন্য তার শ্রদ্ধা একই থাকবে।
তার মন্তব্য, রানি, কনওয়েলথ, সেনাবাহিনী সব কিছুতেই জড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। শুধু জনতার অর্থ নিতে চাইনি। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা কার্যকর করা যায়নি। তাই এটাই মেনে নিয়েছি। আমি জানি, কী করতে চাই। সেটা পাল্টায়নি।
‘সিনিয়র রয়্যাল’ হিসেবে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে হ্যারি বলেছেন, অনেকের চ্যালেঞ্জ, বহু মাসের কথাবার্তার পরে এই সিদ্ধান্তে আসা। সব ঠিকমতো হলো না। আর কোনও উপায় ছিলও না। আবারও বোঝাতে চাই, আমরা দূরে সরে যাচ্ছি না। আপনাদেরও দূরে যেতে বলছি না।
কথা বলতে বলতে হ্যারি ভাগ করে নিয়েছেন অনেক অভিজ্ঞতাই। বলেছেন, শান্তিপূর্ণ জীবনের খোঁজে চেনা পরিবার থেকে সরে যাওয়ার চাপ ছিল। এই সূত্রে মা, প্রাক্তন যুবরানি ডায়ানার কথাও বলেন হ্যারি। তার কথায়, ২৩ বছর আগে মাকে হারানোর পরে আপনারা পাশে ছিলেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ক্ষমতাধর। এখন আমার আশা, এক দিন আমরা পরস্পরের প্রতি সামগ্রিক সমর্থনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবো।
Development by: webnewsdesign.com