হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া মণিরামপুরের সেই লিতুনজিরা পছন্দমতো স্কুলেই পড়তে পারবে। এই আশ্বাস দিয়েছেন মণিরামপুরের ইউএনও। আর দুর্ব্যবহারকারী প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি দেখছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় লিতুনজিরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর অসৌজন্যমূলক আচরণে চরম অসন্তুষ্ট মা-বাবা এই স্কুলে ভর্তি করাননি মেয়েকে। ফলে মেধাবী লিতুনজিরা পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে স্বপ্নের প্রথম ধাপ অতিক্রম করলেও দ্বিতীয় সিঁড়িতে হোঁচট খায়। প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর মুখে উচ্চারিত কয়েকটি শব্দ তাকে সাময়িকভাবে থামিয়ে দেয়।
মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের কলেজশিক্ষক হাবিবুর রহমান ও গৃহিণী জাহানারা বেগমের একমাত্র সন্তান লিতুনজিরা। ২০১৯ সালে স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। হাত-পা না থাকায় মুখে ভর দিয়ে লিখে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কখনো হুইল চেয়ারে চড়ে বা কখনো মা-বাবার কোলে চড়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো লিতুনজিরা।
গত ২৩ ডিসেম্বর মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় লিতুনজিরা। ওই রাতে প্রকাশিত ফলাফলে সে স্কুলটিতে ভর্তির সুযোগও পায়।
লিতুনজিরার মা জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ভর্তি পরীক্ষায় স্কুলের দোতলায় আসন পড়ে মেয়েটির। হুইল চেয়ারে করে মেয়েকে উপরে নেওয়া কষ্টসাধ্য বলে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে নিচে তার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন তিনি বলেন, ‘কোমরে করে বস্তাভর্তি ধান ঘরের ছাদে তুলতে পারেন, মানুষ মাথায় করে ইটবালি তুলে কত বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করছে। আর মেয়েকে নিয়ে আপনি উপরে উঠতে পারবেন না! এসব প্রতিবন্ধীদের এমন স্কুলে পড়ানোর দরকার কি?’’ প্রধান শিক্ষকের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণে মায়ের সঙ্গে লিতুনজিরাও ভীষণ কষ্ট পায়। তখনই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার আশা ছেড়ে দেয় সে।
এরপর গত ১ জানুয়ারি উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মেয়েকে ভর্তি করান হাবিবুর রহমান। লিতুনজিরার মতো মেধাবী ছাত্রী পেয়ে খুশি সেখানকার শিক্ষকরা।
এদিকে, সুযোগ থাকা সত্তে¡ও কাক্সিক্ষত সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে লিতুনজিরার ভর্তি না হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশচন্দ্র সরকারকে নিয়ে লিতুনজিরার বাড়িতে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী। একইসঙ্গে বাড়িটিতে যান অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। খবর পেয়ে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা হাজির হন।
লিতুনজিরা ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা কথা বলে ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। লিতুনজিরাকে তার স্বপ্নের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য বাবা হাবিবুর রহমানকে অনুরোধ করেন ইউএনও। এসময় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী লিতুনজিরার মায়ের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার আচরণে লিতুনজিরার মা কষ্ট পাবেন- তা বুঝতে পারিনি। আমি এর জন্য তাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। লিতুনজিরাকে বুঝিয়ে আমার স্কুলে নেওয়ার জোর চেষ্টা করছি।’
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুলনাঞ্চল নিভারানী পাঠকের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন। লিতুনজিরার পিতা-মাতার সাথে বিষয়টি নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। লিতুনজিরা তার পছন্দমতো যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে চায়, সবসময় তারপাশে আমি আছি এবং থাকবো।’
Development by: webnewsdesign.com