বাবা মারা গেছেন ৩৩ বছর আগে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে বাবার গল্প, সৌন্দর্যের বর্ণনা আর দূরদেশের স্বজনদের আকুতিতে এখানে এসে যারপরনাই মুগ্ধ যুক্তরাজ্যের তিন নাগরিক। ১০ দিন ধরে তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামবাংলার পথে ঘাটে, স্বাদ নিচ্ছেন দেশীয় নানা খাবারের। এ মাসের শেষদিকে তাঁরা ফিরে যাবেন স্বদেশে।
আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বৈরীয়া গ্রামে বেড়াতে আসা তিন বিদেশিকে নিয়ে দারুণ ব্যস্ত এলাকার মানুষ। নানা পিঠাপুলি, আপ্যায়ন আর খোশগল্পে কাটছে তাঁদের সকাল-সন্ধ্যা।
জানা যায়, আনোয়ারা বটতলীর পূর্ব বৈরীয়া গ্রামের আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আবদুল আজিজের ছেলে আবদুল জলিল ১৯৫০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে একটি কফি শপে চাকরি করতেন তিনি। ১৯৫৪ সালে সেখানে তিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী টেরিজা নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে জলিল-টেরেজার তিন ছেলে ও চার মেয়ে। মুনাফ ও ইউনুচ মারা গেছেন। সেই সময় বাবার মুখে বাংলাদেশের গল্প শুনে গত ২৭ জানুয়ারি বেড়াতে আসেন আবদুল জাব্বার, বোন ফাতেমা এলিয়ট ও তাঁর স্বামী ফিলিপস এলিয়ট। আবদুল জব্বার ও বোন ফাতেমা দুজনের বয়স এখন ৬০-এর কোটায়।
স্থানীয়রা জানান, যুক্তরাজ্যে চাকরি, সংসারের পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর জলিল একবার দেশে এসেছিলেন। এর তিন বছর পর আবার দেশে এসে পরিবারের সম্মতিতে স্থানীয় হালিমা বেগম নামে একজনকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে এক ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। ১৯৮৭ সালে আবদুল জলিল আবার যুক্তরাজ্যে ফিরে যান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পরও দুই পরিবার ও ভাইবোনদের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদানসহ নানাভাবে যোগাযোগ হত। বাংলাদেশের ভাইবোনদের বার বার আমন্ত্রণ ও আন্তরিকতায় বাবার মৃত্যুর দীর্ঘদিন পর তিন বিদেশি নাগরিক পৈতৃক ভূমি দেখতে আসেন বলে জানান।
আবদুল জলিলের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমার ছেলে মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার বিদেশি ভাই বোনেরা গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে ঘুরে বেড়ান পারকি, পতেঙ্গা ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, ফয়’স লেক ও সাফারি পার্কসহ দেশের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, সারল্যে তাঁরা মুগ্ধ। তাঁদের ভাষায়, আতিথেয়তায় যুক্তরাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।’
ম্যানচেস্টারের নাগরিক আবদুল জাব্বার পেশায় একজন স্কুলপরিচালক। তাঁর কাছে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে কি পার্থক্য জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক তফাৎ। আমাদের দেশে মানুষ অতিথিপরায়ণ নয়, তারা অতি ব্যস্ত। আর বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ ও সহজ-সরল।’ বাংলাদেশের কোন খাবার সবচেয়ে ভালো লেগেছে জানতে চাইলে সহাস্যে বলে উঠেন, ‘ইলিশ মাছ, ইলিশ মাছ।’
নগরের ফয়’স লেকে নৌকায় চড়ে ঘুরতে পেরেই বেশি খুশি ফাতেমা এলিয়েট। বাংলাদেশের ভাই-বোন ও স্বজনদের ভালোবাসাকেও তিনি দেখছেন বড় করে। ফাতেমা এলিয়টের স্বামী ফিলিপস এলিয়ট বলেন, ‘বাংলাদেশে আসার আনন্দ কখনো ভুলতে পারব না। ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংসসহ অনেক খাবার ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে রান্না করা ডিম খেতে।’
Development by: webnewsdesign.com