ই-পাসপোর্ট পেতে ভিড়-ভোগান্তি : জমা পড়েছে ১৪ হাজার আবেদন

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৭:৪৮ অপরাহ্ণ

ই-পাসপোর্ট পেতে ভিড়-ভোগান্তি : জমা পড়েছে ১৪ হাজার আবেদন
apps

সব কিছুই করতে হয় অনলাইনের মাধ্যমে। আবেদন করার পর কবে গিয়ে পাসপোর্ট অফিসে ছবি তুলতে হবে সে তারিখও ফিরতি সিস্টেমে আবেদনের সময়ই জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই তারিখ অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তুলে দ্রুত কাজ শেষ করবেন—এমন ভাবনাই লোকজনের। কিন্তু গতকাল সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ই-পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রিন্টেড আবেদন জমা ও ছবি তোলার জন্য লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়ানো লোকজন অভিযোগ করেন, প্রিন্ট কপি জমা নেওয়া ও ছবি তোলার গতি খুব ধীর। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, বারকোড রিডার মেশিন ঠিকমতো রিড করতে পারছে না। ছবি এবং ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি নিতে বেশি সময় লাগছে। অনেকে ঠিকানা ভুল করেছেন। কারো কারো জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা এক স্থানে, আবেদন করেছেন অন্য স্থান থেকে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের কাজের সময় প্রচুর লোক আসছেন ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য। এসব কারণে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে সময় লাগছে। এ ছাড়া রয়েছে জনবল সংকট। এমআরপির কর্মকর্তারাই ই ও এমআরপি পাসপোর্টের কাজ করছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বারকোড রিডের ক্ষেত্রে যাঁরা যেখান থেকে প্রিন্ট দিচ্ছেন সেখানে সমস্যা। বারকোডের প্রিন্টে যদি কালি না পড়ে তাহলে সেটি মেশিনের রিড করতে সমস্যা হতে পারে। যদি কারো জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রামের ঠিকানায় থাকে কিন্তু বর্তমানে ঢাকায় থাকার কথা বলে আবেদন করে থাকেন, তাহলে বর্তমান ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা দেওয়া সাপেক্ষে ই-পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।’

জনবল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাঁরা এমআরপির দায়িত্ব পালন করেন তাঁদেরকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সক্ষমতা অর্জনের পর ধীরে ধীরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এমআরপি বন্ধ করে দিয়ে শুধু ই-পাসপোর্ট চালু রাখা হবে। তখন এই সংকট থাকবে না।’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

গত ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই ই-পাসপোর্টের আবেদন নিচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁও, যত্রাবাড়ী ও উত্তরা পাসপোর্ট অফিস। গতকাল পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি আবেদন সার্ভারে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তারিখ দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন যাঁরা আবেদন করবেন তাঁরা ওই সময়ের পরে ছবি তোলার তারিখ পাবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২২ জানুয়ারি শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ২০ জন ই-পাসপোর্টের বই পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার। অন্য যাঁরা আবেদন জমা দিয়েছেন ও ছবি তুলেছেন তাঁদের পাসপোর্ট প্রিন্ট হওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান জানান, ধীরে ধীরে প্রিন্টের সক্ষমতা বাড়ছে। এই সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ শতাধিক ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট হবে। কোনো জট থাকবে না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে প্রিন্ট কপিসহ ছবি তোলার জন্য এসেছিলেন ব্যবসায়ী মো. আতাহার আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, অনলাইনে গত ৩০ জানুয়ারি আবেদন করেছিলেন। আবেদন গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি ছবি তোলার ও আবেদন জমা দেওয়ার ডেট পান। সেই অনুযায়ী তিনি এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বেশ ভালো লাগছে যে ই-পাসপোর্টের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি। কাজগুলো করতে সময় লেগেছে। এর পরও ভালো লেগেছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ই-পাসপোর্ট বই নেওয়ার তারিখ দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এর আগেই আমাকে এসএমএস করা হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাপিয়া আক্তার ২৪ জানুয়ারি অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন। তাঁকে পাসপোর্ট আবেদন জমা ও ছবি তোলার তারিখ দেওয়া হয় ২ ফেব্রুয়ারি। গত রবিবার তিনি পাসপোর্ট অফিসে গেলে তাঁর আবেদন পরীক্ষা করে কর্মকর্তারা দেখতে পান তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী থেকে; কিন্তু তিনি আবেদন করেছেন ঢাকার ঠিকানায়। ফলে তাঁকে বর্তমান ঠিকানা প্রমাণের কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলেন কর্মকর্তারা। গতকাল যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়ির ইলেকট্রিসিটি বিল, স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসেন। পরে তাঁর আবেদন জমা নেওয়া হয়। আরেক আবেদনকারী মতিউর রহমান জানান, তাঁর স্থায়ী ঠিকানা লিখতে ভুল হয়েছে; কিন্তু তিনি এডিট অপশনে গিয়ে এডিট করতে পারছেন না। ফলে তিনি কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন, ২১ দিন পর তিনি এডিট করতে পারবেন।

এসব বিষয়ে সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘ওয়েব পোর্টালেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাত্র তো শুরু হলো। কী কী সমস্যা হচ্ছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে সমাধানে যাচ্ছি। ভুলত্রুটিগুলো শুধরে সহজে কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে। ধৈর্য ধরতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রিন্ট করার আগে সব তথ্য ঠিক আছে কি না সেগুলো যাচাই করতে হয়। এনরোলমেন্ট ক্যাপাসিটি দেখতে হয়। আরো অপারেটরকে ট্রেনিং দিতে হবে। দিনে একজন অপারেটর ২০টার বেশি করতে পারে না। অনেকের ফিঙ্গারপ্রিন্টে সমস্যা দেখা দেয়। ১০ আঙুলের ছাপ রিড করতে পারে না।’

Development by: webnewsdesign.com