রংপুরে ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু; তদন্ত কমিটি গঠন

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ | ৮:০০ অপরাহ্ণ

রংপুরে ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু; তদন্ত কমিটি গঠন
apps

প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন করার পর পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেয় প্রাইভেট হাসাপাতালের চিকিৎসক। তীব্র যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করে বের করা হয় ওইসব গজ-ব্যান্ডেজ। অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে মারা যান প্রসূতি মা নাসিমা বেগম।

রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৫ নভেম্বর রংপুর নগরীর মীরগজ্ঞ তামফাট এলাকার রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী নাসিমা বেগম নগরীর ধাপ এলাকায় অবস্থিত রোজ প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওইদিনই তার সিজারিয়ান অপরারেশন করা হয় এবং একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। অপরাশেন করার পর নাসিমা বেগমের পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেয়া হয়।

হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার পর তার পেট ফুলে যায়। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করার পর ১২ নভেম্বর রোজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে ভর্তি না করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়। আবারও বাসায় চলে আসার পর ফের তীব্র ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে নাসিমা বেগমকে ১৫ নভেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আলট্রা-সনোগ্রাম করার পর পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ ধরা পড়ে। রবিবার বিকেলে তার পেটে অপরারেশন করে গজ-ব্যান্ডেজ বের করেন চিকিৎসকরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায় নাসিমা বেগম।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জিকাল ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. স্বপন জানান, প্রসূতির অপারেশন করে পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজসহ আরও কিছু জিনিসপত্র পাওয়া যায়। রোগীর অবস্থা এমনিতেই গুরতর ছিল। তার পেট ফুলে গিয়েছিল। ভেতরে রক্তক্ষরণ হওয়ায় রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রসূতি নাসিমা বেগম মারা যাবার খবরে তার স্বামী রাশেদুল ইসলাম, ভাই রবিউলসহ অন্যান্য স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় হাসপাতাল চত্বরে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

এদিকে রোজ প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেবার জন্য রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নাসিমা বেগম মারা যাবার খবর জানাজানি হওয়ায় ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়।

স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তার ও নার্সদের দায়িত্বহীনতার কারণে সিজারিয়ান অপারেশন করার পর পেটের ভেতরে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করে দেয়ায় ইনফেকশন জনিত কারণে নাসিমা বেগম মারা গেছেন। তারা দায়ী ডাক্তার-নার্সসহ রোজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এদিকে রোজ প্রাইভেট হাসপাতালের ম্যানেজার মোবারক হোসেন মিলন সিজারিয়ান অপারেশন করার কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীর পেটে পুঁজ হয়ে ইনফেকশন হয়েছিল।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব বর্ম্মন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নেয়া হচ্ছে।

এর আগে শনিবার রাতে নগরীর বাস টার্মিনাল এলাকায় লাকী হসপিটালে মাজেদা বেগম নামের এক প্রসূতি ভুল সিজারিয়ান করার সময় মারা গেলেও রোগীর স্বজনদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর ক্লিনিক মালিক সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ এলাহী বিপ্লব।

তারপর আর কে রোড সংলগ্ন এশিয়ান ক্লিনিকে ও এই একই ঘটনা ঘটে২৪/১০/১৯।ইং তারিখে ।এশিয়ান ক্লিনিকের কতৃপক্ষ এক সংবাদ কর্মীকে মোটো ফোনে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।তিনি আরো বলেন, টাকা দিয়ে পুলিশকে প্রশাসনকে মেনেজ করে নিয়েছি।আর কোন সমস্যা নেই বলে জানান,ক্লিনিক কতৃপক্ষ নুরুজ্জামান এর বউ ইলোরা বেগম জানান।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৭ দিনে রংপুরের ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল অপারেশনে ৮ জন মা ও নবজাতক মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ভর কুমার রায়।

Development by: webnewsdesign.com