শিক্ষকদের অবহেলায় দেয়া হয় নি এসএসসি পরীক্ষা

মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

শিক্ষকদের অবহেলায় দেয়া হয় নি এসএসসি পরীক্ষা
apps

সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীরগাঁও ইমদাদুল হক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের হাঁসকুড়ি গ্রামের দিনমজুর তাজনূরের মেয়ে তামান্না আক্তারের। কিন্তু তার শিক্ষকদের হেয়ালিপনাতে নির্বাচনী পরীক্ষায় নিয়মিত হওয়ার পরও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আর এ ঘটনায় মেধাবী ছাত্রী তামান্না মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়ছেন। সহপাঠীরা পরীক্ষা দিচ্ছে আর সে পথ চেয়ে দেখছে। এর প্রভাব পড়েছে তামান্নার পরিবারেও।

তামান্না ও তার বাবা জানান, ‘এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় নিয়মিতভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছিল তামান্না। শিক্ষকরা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩ হাজার ১শ টাকা নির্ধারণ করলে তার পরিবারের পক্ষে তৎক্ষণাত এতো টাকা জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবু তার বাবা ১ হাজার টাকা দশম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক (মাওলানা স্যার)’র কাছে জমা দিয়ে আর্থিক সমস্যার কথা জানান। শিক্ষক টাকা গ্রহণ করেন এবং বাকি টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কথা বললেও পরবর্তীতে আর কোনো খোঁজ কোনো শিক্ষকই নেননি।

 

 

 

তামান্না জানায়, ‘এক হাজার টাকা জমা দেওয়ার পরও নিয়মিত সে বিশেষ ক্লাস করেছে। জরুরী কোনো কারণ ছাড়া ক্লাস মিস করেনি। সব সময় স্কুলে যাওয়ার পরও কোনো শিক্ষক তাকে বাকি টাকার কথা বলেন নি। প্রায় দেড়মাস অতিক্রম হওয়ার পর যখন এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র বিতরণের সময় আসে তখনও শিক্ষক তাকে বাকী টাকা জমা দিয়ে প্রবেশ পত্র নেওয়ার কথা বলেন। সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশ পত্র আনতে গেলে তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি বলে জানান শিক্ষকরা।

অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক আজিজ মিয়া জানান, ‘মেয়ের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। মেয়েকে আমরা বার বার বলেছি টাকা না দিলে রেজিস্ট্রেশন হবে না। যদি আমাদের অার্থিক সমস্যার কথা বলতো আমরাই এর ব্যবস্থা করে দিতাম। কিন্তু বিশেষ ক্লাসেও অনিয়মিত ছিলো। বার বার বলেছি।

 

 

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো গাফিলতি এখানে ছিলো না। যা ঘটেছে তা দুঃখজনক। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। তবু আমরা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সভাপতি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মেয়ে ও তার বাবাকে বুঝিয়েছি। দুঃখ প্রকাশ করেছি।

 

 

 

পূর্ব বীরগাঁও স্টুডেন্ট ফোরামের সভাপতি ছাইদুল ইসলাম বলেন, ‘তামান্নার সাথে যা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অমানবিক। একজন ছাত্রীর সাথে এমন আচরণ না করলেও পারতেন শিক্ষকরা। তাদের মনে রাখা উচিৎ তারা শিক্ষক। হেয়ালিপনা করে একজন ছাত্রীর জীবন থেকে এভাবে একটি বছর কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই।

বীরগাঁও গ্রামের ছলিব নূর বাচ্চু বলেন, ‘আমিও বিষয়টি সম্পর্কে জানি। তারা ১ হাজার টাকা কম দেওয়ায় মেয়েটির রেজিস্ট্রেশন করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। মূলত স্কুল শিক্ষকদের গাফিলতিতেই এমনটা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক রঞ্জন পুরকায়স্থকে মুঠোফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। লিখিত কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। যদি আসে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

Development by: webnewsdesign.com