নড়াইল হাসপাতালে ১২ জন কর্মীর স্থলে কাজ করেন ৪৬ জন বেতন না পাওয়ায় জড়িয়ে পরছেন দূর্ণীতিতে

শনিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

নড়াইল হাসপাতালে ১২ জন কর্মীর স্থলে কাজ করেন ৪৬ জন বেতন না পাওয়ায় জড়িয়ে পরছেন দূর্ণীতিতে
apps

নড়াইল সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মীর পদ ১২টা কিন্তু কাজ করছেন ৪৬ জন। ১২ জনের বেতন-ভাতা সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিলেও ৭ মাস বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। অধিকাংশ আউটসোর্সিং কর্মী এখন হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজে লিপ্ত। অনেককে এ কাজে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা সদর হাসপাতালে এক ঝটিকা সফরে যান। হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মে ৮ জন চিকিৎসক ও ২ জন মেডিকেল প্যাথলজিস্টকে, খাবারের দায়িত্বে থাকা ১ জন কর্মচারীকে শোকজ এবং রোগীদের খাবার কম দেওয়ায় আউটসোর্সিং-এর ১ কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে সাংসদ মাশরাফি ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সদর হাসপাতালে আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকায় ৪ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ সামগ্রিক সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিলেও অনেক নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে। জানা গেছে, ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে বর্তমানে ১ জন ইলেকট্রিশিয়ান, ১ জন পাম্প অপারেটর, ১ জন সহকারী বাবুর্চি, ১ জন মালি, ৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী, ৩ জন আয়া ও ১ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ মোট ১২ জন নিয়োগপ্রাপ্ত আউটসোর্সিং কর্মী রয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে বর্তমানে ৪৬ জন কাজ করছে। ইলেকট্রিশিয়ান ও পাম্প অপারেটররা ১৭ হাজার ১৩০ টাকা, বাবুর্চি ও মালি পদে ১৬ হাজার ৪৩০ টাকা এবং বাকি পদের কর্মীরা ১৬ হাজার ১৩০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এক একজন গড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পান। ১২ জনের প্রাপ্ত টাকা সবার মধ্যে সমন্বয় করেন ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত রোজার ঈদের সময় বেতন-ভাতা পেয়েছেন, আর পাননি। ভুক্তভোগী এক রোগী হোসনে আরা জানান, তিনি হাতে-পায়ের সমস্যা নিয়ে গত শনিবার নড়াইল সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসার ডা. দীপংকর কুমারকে দেখালে তিনি এক্স-রে করতে বলেন। এ সময় ওই চিকিৎসকের পাশে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘স্যার ভিক্টোরিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন সেখান থেকে টেস্ট করান।’ তখন ওই রোগী ৭০০ টাকা দিয়ে সেখান থেকে এক্স-রে করান। কিন্তু সদর হাসপাতাল থেকে এক্স-রে করলে এর অর্ধেক টাকা খরচ হত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের একাধিক আউটসোর্সিং কর্মী বলেন, ‘হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারীর হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এই কর্মচারী হাসপাতালের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় তিনি আমাদের ও এমএলএসএস কর্মচারীদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। ফলে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে তাঁর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’ অন্যদিকে, ১৫ জানুয়ারি বিকেলে আউটসোর্সিং কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন কর হয়। হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রভাবশালী মালিক কর্তৃপক্ষ এ সভার আয়োজন করে। সভায় তাঁদের ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং-এর ঠিকাদার মো. মাহবুব রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ না পাওয়ায় তাঁরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। তবে খুব শিগগিরই এ বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, ১২ জনের জায়গায় বর্তমানে কাজ করছেন ৪৬ জন। রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন বিবেচনায় দিন দিন এসব কর্মী বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন। সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী বলেন, গত ১ মাস আগে আউটসোর্সিং কর্মীদের বকেয়া বেতনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বলেন, কিছু আউটসোর্সিং কর্মীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ৪ মাস আগে ৩ জনকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁরা ভুল স্বীকার করে আবার কাজে যোগদান করেছে। সদর হাসপাতালের সদ্য যোগদানকারী তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, হাসপাতালে যোগদান করেই আউটসোর্সিং কর্মীসহ কিছু অনিয়মের খবর কানে এসেছে। ১২ জন আউটসোর্সিং কর্মীর জায়গায় কাজ করছে ৪৬ জন। এটা দেশের কোথাও দেখিনি। তারপরও যদি জরুরি কাজ সম্পন্ন না হয় তাহলে তো দুঃখজনক ঘটনা। খুব শিগগিরই হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে।

Development by: webnewsdesign.com