‘পরকীয়া’ বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করবে পিবিআই

বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২ | ৯:২৯ অপরাহ্ণ

‘পরকীয়া’ বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা করবে পিবিআই
apps

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের ‘পরকীয়া সম্পর্ক’ খতিয়ে দেখতে তার হাতের লেখা পরীক্ষা করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী ২২ মার্চ তার উপস্থিতিতে হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর আগে গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলমের আদালতে আবেদন করেন পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা।

পিবিআই সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন বাবুল আক্তার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ওই সময় গায়ত্রী ‘তালিবান’ ও ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’ নামে দুইটি বই বাবুল আক্তারকে উপহার দেন। এর মধ্যে ‘তালিবান’ বইয়ের ২৭৬ পৃষ্ঠার পরের পাতায় বিভিন্ন তারিখ উল্লেখ করে দুজনের সম্পর্কের বিভিন্ন তথ্য লিখেন বাবুল আক্তার। বই দুইটি জব্দ করেছে পিবিআই। বইয়ের লেখার সঙ্গে বাবুল আক্তারের লেখা মেলাতে এ আবেদন করা হয়েছে। গত বছরের ১২ মে স্ত্রী হত্যায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ অভিযোগ করেন, বাবুল আক্তারের মোবাইলে পাঠানো গায়ত্রীর ২৯টি মেসেজ খুনের শিকার হওয়ার আগে মিতু তার ব্যবহৃত একটি খাতায় লিখে যান। এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া দুটি বইয়ে তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কের কিছু লিখিত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিষয়টি জেনে যাওয়ার পর মিতুর সঙ্গে বাবুলের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন এবং সহযোগীদের নির্দেশ দিয়ে মিতুকে খুন করান।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিাইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘একটি বইয়ে বাবুলের বিভিন্ন তথ্য লেখা রয়েছে। লেখাগুলো বাবুলের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। লেখাগুলো বাবুলের হাতের লেখা কিনা তা পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত ২২ মার্চ তার হাতের লেখা নমুনা নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন।’

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। খুনিরা গুলি করার পাশাপাশি তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ঘটনার সময় বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার নিজে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।

এ ঘটনায় গতবছরের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। প্রতিবেদনে পিবিআই বলছে, মিতু হত্যা ছিল ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’। বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটা সংঘটিত হয়। মিতুকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।

একই দিন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন। মামলায় আসামি করা হয়- বাবুল আক্তার, তার ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে শাক্কু, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালুকে।

এর আগে গত ১০ মে মামলার বাদী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে ডেকে আনা হয় বাবুল আক্তারকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ মে তাকে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেনের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর বাবুলের করা মামলায় পিবিআইর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন তার আইনজীবী। ৩ নভেম্বর আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদালতের এই আদেশের পর পিবিআই বাবুলের শ্বশুরের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এটির বিরুদ্ধে শ্বশুর নারাজি আবেদন করলে গত ৬ মার্চ খারিজ করে দেন আদালত।

 

Development by: webnewsdesign.com