গ্লাসে পৃথিবীর ইতিহাস!

বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩:১২ অপরাহ্ণ

গ্লাসে পৃথিবীর ইতিহাস!
apps

২০০৫ সালে প্রকাশিত একটি বই নজর কেড়েছিল অনেকের। মূলত সেই বইটি নিয়েই আজকের আলোচনা।

বরফ যুগের পরপরই বিয়ারের প্রচলন শুরু। অর্থাৎ যিশুর জন্মের প্রায় ১০ হাজার বছর আগে।

‘ফার্টাইল ক্রিসেন্ট’ নামে পরিচিত বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য ও মিশরে এর জন্ম। তখন এখানে এত বুনো শস্য জন্মাত যে উদ্বৃত্ত শস্য ভিজিয়ে রেখে পরে তা থেকে বিয়ার তৈরি শিখে ফেলে স্থানীয়রা। এই মদিরায় এমনই মজেছিল তারা এর বিপুল উৎপাদন শুরু করে দেয়। তারা খামার তৈরি করে এবং এক জায়গায় স্থায়ী হতে শেখে।

ওয়াইনের গ্লাসে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’

মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের অ্যাসিরিয়া রাজ্যে প্রথম ওয়াইন তৈরি হয়। ওয়াইন মূলত সমাজে শ্রেণিবিভাজনকে স্পষ্ট করে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করে। তখন এটি ছিল এলিটদের পানীয়। পরবর্তীতে গ্রিকদের কাছে এসে ওয়াইন আরেকটু সহজলভ্য হলেও ভালো ওয়াইনগুলো ছিলো উঁচুশ্রেণির কাছেই। রোমানরাও সেই একইপথ অনুসরণ করে। তখন বিয়ার ছিল বারবারিয়ানদের পানীয়।

ইউরোপের অ্যালকোহল

আরবে প্রথম অ্যালকোহল আবিষ্কার হলেও তা ঔষধের কাজে ব্যবহৃত হত। কিন্তু ইউরোপীয়রা মদ হিসেবে এর এমন সম্ভাবনা দেখল যে, সারা পৃথিবীতে এর বাজারজাত করা শুরু করল। এতে তাদের উপনিবেশ তৈরি করা অনেক সহজ হলো। যেমন, ১৬০০ শতাব্দীর দিকে তারা ক্যারিবীয় দ্বীপ বারবাডোসে আখ ও চিনি উৎপাদন শুরু করল। রামের অনেক চাহিদা ছিল এবং রামের জন্য এই চিনি দরকার ছিল।

রামের কারণে হাতছাড়া আমেরিকা

১৭৩৩ সালে ব্রিটিশরা আমেরিকাতে নিয়ম করল, তারা যদি ব্রিটিশ কলোনি ছাড়া আর কোথাও থেকে গুড় আমদানি করে তাহলে কর দিতে হবে। কিন্তু আমেরিকান কলোনিস্টরা তা না মেনে চোরাই পথে উচ্চ মানের ফ্রেঞ্চ গুড় আমদানি করতে লাগল। এভাবেই ব্রিটিশ আইন লঙ্ঘন করতে করতে একটা সময় বিপ্লবী যুদ্ধ শুরু করল আমেরিকানরা।

কফি বদলে দিল সমাজব্যবস্থা

মধ্যযুগে আরবে কফির প্রচলন শুরু হলো। ইউরোপে এল সতের শ শতাব্দীতে। এসেই সাড়া ফেলে দিল। ইউরোপের বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীরা দিনের পানীয় হিসেবে কফিকে গ্রহণ করল কারণ, এটা বিয়ার বা ওয়াইনের মতো মাতাল করে না। ঠিকঠাক অবস্থায় কাজ করা যায়। ইউরোপজুড়ে কফি হাউজ খুলতে লাগল। এমনকি ফরাসী বিপ্লবের কারিগররা এই কফিশপগুলোতেই বিপ্লবের নকশা আঁকা শুরু করেন।

চীনাদের চা হয়ে উঠল আভিজাত্যের প্রতীক

চীনাদের চা প্রথম ডাচরা আমদানি করে সতের শ শতকে। ক্রমে ব্রিটিশরাও তা পছন্দ করতে শুরু করে। প্রথমে উঁচু শ্রেণির মানুষের কাছে ফ্যাশন হয়ে উঠল এই পানীয়। পরে নিচু শ্রেণির মানুষেরাও শ্রেণি উন্নয়ন করতে তা পান করতে লাগল। বিশেষ করে নারীদের কাছে এই পানীয় হয়ে উঠল খুবই আকর্ষণীয়। কারণ সন্ধ্যার পর কফি হাউজে তাদের ঢোকা নিষেধ ছিল। কিন্তু চায়ের দোকানে যেতে পারতেন তারা।

চা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা

চায়ের জনপ্রিয়তা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রভাবশালী করে তুলল। তারা ব্রিটেনে চা রপ্তানি করত এবং এতই আয় করত যে, ব্রিটিশ সরকারি সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারত। তারা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে চা রপ্তানি করা শুরু করল, তাও বিনা শুল্কে। অথচ তারা ব্রিটিশ সরকারকে বাধ্য করল স্থানীয় আমেরিকান ব্যবসায়ীদের ওপর কর বসাতে। মার্কিন বিপ্লবের অনেক কারণের একটি এই কর।

কোকা-কোলার কোলাহল

আরো এক শ বছর পর কোকা-কোলা আবিষ্কার হলো যুক্তরাষ্ট্রে। বৈশ্বিক পানীয়র তালিকায় এটিই আমেরিকার সবচেয়ে বড় অবদান। গ্যাস মিশ্রিত পানির সঙ্গে কোকা মিশিয়ে এই পানীয় তৈরি করে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় করে তোলেন জন পেমবার্টন নামের এক ব্যক্তি। প্রথমে মার্কিনিরা পানীয়টি নিয়ে খুবই রক্ষণশীল থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে একে ছড়িয়ে দেন। অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখতে শুরু করে কোকা-কোলা।

Development by: webnewsdesign.com