বড়াইগ্রামের কৃষকরা নদী আর বিলের পানিতে কচুরীপানার ভাসমান বেড বানিয়ে রকমারী সব্জি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কীটনাশকের ব্যবহার নেই বলে উৎপাদিত সব্জিও নিরাপদ। দিন দিন আবাদী জমি কমে যাওয়ায় জলাবদ্ধ জমিতে এই সব্জি চাষ কৃষি উৎপাদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বাটরা, বাঘাইট, মেরিগাছা, ধানাইদহ, তারানগর গ্রামে বয়ে যাওয়া নাগর ও খলিসাডাঙ্গা নদী এবং চিনিডাঙ্গার বিলে কচুরিপানা ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে ভাসমান বেড। এসব গ্রামের ৩০ জন কৃষক শতাধিক বেডে উৎপাদন করছেন লালশাক, কলমীশাক, পালংশাক, করলা, শসা আর লাউ। কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
বাটরা গ্রামের আব্দুল মজিদ চিনিডাঙ্গা বিলের জলমগ্ন জমিতে কচুরিপানা দিয়ে আটটি বেড তৈরী করে লাল শাক, গিমা কলমি, লাউ ও শষার চাষ করেছেন। পাশে আরো সাত কৃষক একইভাবে সব্জি চাষ করেছেন। লাউ ও শসা চাষের জন্যে মাচাও তৈরী করেছেন।
কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, যে জমিতে সব্জির চাষ করা হচ্ছে তাতে জলাবদ্ধতা ও কচুরিপানার কারণে কোন ফসল হতো না। এখন অক্টোবর থেকে জানুয়ারী এসব জলাধারে শীতকালীন সব্জির চাষ করছি। ফিরোজুর রহমান জানান, ভাসমান বেডে সব্জি চাষ খুবই লাভজনক। বেডে প্রাকৃতিক উপাদানে জৈবিক সক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
কৃষক আব্দুল বারী বলেন, চলতি বছর একটি জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান বেডে সব্জি চাষ করেছি। এসব বেডে সব্জি চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও আগাছার আধিক্য নেই। ইতিমধ্যে উৎপাদিত সব্জি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি।
কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, আবাদ শেষে কচুরীপনার বেড উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে বোরো ধান আবাদে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়ে নতুন এই চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে ও চাষাবাদের খোঁজখবর নিতে প্রায় দিন আশেপাশের কৃষকরা ভাসমান বেড এলাকায় ভিড় করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ভাসমান সব্জি চাষের জন্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ছাড়াও বেড তৈরীর নেট, সব্জি বীজ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রদান করেছে। প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়াও সম্প্রতি কৃষকদের নিয়ে বাটরা মাঠে মাঠ দিবসের আয়োজন করেছে। এতে ভাসমান সব্জি চাষের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে উপকৃত হয়েছেন কৃষকরা। তাঁরা জানান, আগামী মৌসুমে তাদের বাড়ীর পাশের জলাধারে বেডে সব্জি চাষ করবেন। এতে করে আশা করা হচ্ছে, আগামীতে ভাসমান বেডে আবাদের পরিধি বাড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ লাভজনক। আবার বিষমুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ও জলবায়ুর জন্য উপকারী। যেসব স্থানে সবজি চাষ হচ্ছে সেখানে কচুরীপানা ও জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা এসব জমি ব্যবহার করতে পারতেন না। ভাসমান বেড তৈরীতে ব্যবহৃত কচুরীপানা পরবর্তীতে জৈব সারে পরিণত হচ্ছে। আবার জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মনোনীত দেশের কৃষিতে একমাত্র ‘বিশ্ব ঐতিহ্যথ- এই চাষাবাদ পদ্ধতি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. রবিআহ নূর আহমেদ বলেন, বড়াইগ্রামে ভাসমান বেডে সব্জি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলনবিলসহ জেলায় এই চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে কৃষি বিভাগ।
Development by: webnewsdesign.com