কমলগঞ্জে আউশ ধান ঘরে তোলতে ব্যস্ত কৃষকরা

সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১ | ৩:৩২ অপরাহ্ণ

কমলগঞ্জে আউশ ধান ঘরে তোলতে ব্যস্ত কৃষকরা
apps

কমলগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠে চলছে এখন আউশ ধান ঘরে তোলার উৎসব। যদিও মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ বৃষ্টিপাতের দেখা মিলেনি। অন্যান্য বছরের যে’সময়ে জেলার হাওর, নদী-নালা, খালবিল পানিতে ভরপুর থাকতো। এ বছরে গেল বছরের ন্যায় বর্ষার কোন চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে এই অঞ্চলে বষার্য়ও কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা নেই।

অনেক কৃষক জমিতে আউশ ধানের চারা রোপন করেছিলেন। ফলে ভাল ফসলও পেয়েছেন। অন্যদিকে উপজেলার বহু কৃষক বৃষ্টি ও সেচের সংকটে আউশ চাষ করতে পারেননি। এবার বিরূপ আবহাওয়ার পর সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে আউশের ফলন ভালো হওয়ায় অবশেষে কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। কেউ কেউ ধান কাটার প্রস্তুুতি নিতে শুরু করেছে। আবার কেউ বা ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য রোদ্রে শুকাচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে এবছর আউশের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার কম জমিতে আউশ ধান চাষ করা হলেও এবার ফলন ভাল হয়েছে গত বছরের চেয়ে। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সার, পোকা মাকড় ও আগাছা দমনসহ সকল বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে পদক্ষেপ গ্রহন করে চাষীদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যে কারনে এ বছর আউশ ধানের ভাল ফলন হয়েছে এই উপজেলায়।

সরেজমিনে কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, শমশেরনগর, রহিমপুর, মুন্সিবাজার, পতনঊষার ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় আউশ ধান ঘরে তুলতে কৃষক কৃষাণি কারও যেন একটুও অপেক্ষা নেই। চারদিকে এখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা। আকাশে ঝড়ের কালো রং দেখলেই কৃষক তাড়াতাড়ি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত।

কৃষক, কৃষাণি ও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নিজ নিজ জমির আউশ ধান কর্তন করছেন, কেউ আবার মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করছেন, খড় থেকে ধান ছাড়াচ্ছেন,কোথাও আবার রাস্তায় খড় ও ধান রোদ্রে শুকাচ্ছেন।

মুন্সিবাজারের কৃষক আব্দুস ছামাদ জানান, এবার শুরু থেকে পানির অভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার ৩ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি, ফলনও ভাল হয়েছে। ধান তুলতে ও শুকাতে কিছুটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আকাশে কিছু সময় বৃষ্টি আবার কিছু সময় রৌদ্র এবং বৃষ্টির পানিতে উঠান ভেজা থাকায় আমাদের ধান শুকাতে সমস্যা হচ্ছে।

শমশেরনগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বারী, মছদ্দর আলী, আবুল কাশেম ও আমির আলী বলেন, বষার্র ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রায় ১০ একর আউশ জমি চাষাবাদ করতে পারেনি। আউশের চারা রোপনে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে অল্প অল্প বৃষ্টিপাতের মাঝে ৫ একর আউশ জমি চাষ করেছি তাতে ফসল ভাল হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে আরও কিছু জমি চাষ করা যেতো।

রহিমপুর ইউনিয়নের কৃষক আলতা মিয়া বলেন, বষার্কালে পানির অভাব ছিল এরকম কোনো সময় দেখিনি। আউশ জমিতে ক্ষেত করতে খুব ভোগান্তি পেতে হয়েছিল। আল্লাহর দয়ায় ফসল ভাল হওয়ায় এখন আনন্দ লাগছে। বউ বাচ্চাকে নিয়ে শান্তিতে ভাত খেতে পারবো।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার বিশ্বজিৎ রায় বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে আমরা সার, সেচ, পোকা মাকড় ও আগাছা দমনসহ সকল বিষয়ে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহন করে চাষীদের পরামর্শ প্রদান করেছি। যে কারনে এ বছর বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টির প্রতিকূলতা কাটিয়ে আউশ ধানের ভাল ফলন হয়েছে।

এসময় তিনি আরো বলেন, যেসব কৃষকের ধান পাকা এবং কাটার উপযোগি হয়েছে তারা সময় নষ্ট না করে তারাতাড়ি ধান কেটে ফেলাই ভাল হবে। এতে ফলনের সঠিক পরিমান ঠিক থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ে ধান না কাটলে বৃষ্টিপাতে ধান পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যে পরিমানে ধান পাওয়ার কথা তার থেকে কম পাবে। নির্দিষ্ট সময়ে ধান কেটে সংগ্রহ করার আহবান জানান কৃষকদের।

Development by: webnewsdesign.com