বর্তমানে সারাবিশ্ব মহামারি করোনায় থমকে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। সেখানে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে করোনা কালিন সময়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানির পরিমাণ বেড়েছে।
সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ২২৯ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে। অর্থাৎ ২ কোটি ৭২ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের তুলনায় এক কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য রফতানি হয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরীন জটিলতার কারণে এই বন্দর দিয়ে আরও বেশ কিছু পণ্য রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও তা সম্ভাব হচ্ছে না জানান হিলি বন্দরের রফতানিকারকরা।
হিলি কাস্টমস তথ্য মতে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে কর্টন র্যাগস (বর্জ্য কাপড়), রাইস ব্রান অয়েল, পানির পাম্প রফতানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে তিন হাজার ৪০০ পিস পানির পাম্প, ২৮৫ টন কর্টন র্যাগস, ২৬ হাজার ৪৬৫ টন রাইস ব্রান অয়েল ভারতে রফতানি হয়েছে। এসব পণ্য ভারতে রফতানি করে আয় হয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলার।
একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ৬০০ পিস পানির পাম্প, ১১৯ টন কর্টন র্যাগস, ১৯ হাজার ৬৭০ টন রাইস ব্রান অয়েল, চার টন পানির পাম্পের বিভিন্ন পার্টস রফতানি হয়েছিল। যা থেকে এক কোটি ৫৮ লাখ ৯৪ হাজার মার্কিন ডলার আয় হয়েছিল।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, হিলি বন্দর দিয়ে দিন দিন পণ্য রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। তবে ব্যাপক হারে পণ্য রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
ভারতের অভ্যন্তরীন কিছু জটিলতার কারণে আমরা ভারতে বেশি পরিমাণে পণ্য রফতানি করতে পারছি না। কারণগুলো হলো- ভারতের হিলি কাস্টম সুপারের ওপরে কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নেই, উদ্ভিদ সংগনিরোধ অফিস নেই, কোনও শেড নেই, রাস্তাঘাট ভালো নয়।
এজন্য ভারতে চাহিদা থাকলেও পণ্য রফতানি করতে পারছি না। এছাড়া বন্দরসহ অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় রফতানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে গিয়ে সময়মতো পণ্য খালাস করতে পারে না। ফলে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যায় না। এ কারণে আগে বন্দর দিয়ে বেশ কিছু পণ্য রফতানি হলেও বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে।
বন্দর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল; বিশেষ করে কাঁচা মরিচ, আলু, বেগুন, কলাসহ শাকসবজি ভারতে রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বিষয়গুলো বিভিন্ন দফতরকে অবহিত করেছি। সমস্যাগুলো যদি সমাধান করা হয় তাহলে বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য রফতানি বাড়বে। এতে আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি।
হিলি স্থলবন্দরের কাস্টম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান লিটন বলেন, আমরা যে সময় কাঁচা মরিচ ভারত থেকে আমদানি করি। ঠিক ওই সময়ে দেশের বাজারে মরিচের দাম বেড়ে যায় ও ব্যাপক চাহিদা থাকে। আবার আমাদের দেশে যখন পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচের উৎপাদন হয় তখন বাজারে ৫-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়।
ওই সময় ইচ্ছা ও চাহিদা থাকলেও ভারতে কাঁচা মরিচ রফতানি করতে পারি না। এছাড়া আমাদের জয়পুরহাট, বগুড়া, মোকামতলা এলাকায় প্রচুর পরিমাণ কলা ও সজনে ডাঁটার উৎপাদন হয়। এসবের ব্যাপক চাহিদা আছে ভারতে। তারপরও ভারতের অভ্যন্তরীন কিছু সমস্যার কারণে রফতানি করতে পারি না। সমস্যাগুলো সমাধান করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলার। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি মূল্য ছিল এক কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮২.৮৭ ভাগ। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে রাইস ব্রান, ওয়াটার পাম্প, কর্টন র্যাগস রফতানি হয়।
তবে বন্দর দিয়ে ব্যাটারি, জুস, কৃষিপণ্যও রফতানির সুযোগ আছে। এসব পণ্য রফতানি হলে আরো বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
Development by: webnewsdesign.com