হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে স্কুলছাত্র কে খুন

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ | ৪:১৭ অপরাহ্ণ

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে স্কুলছাত্র কে খুন
ছবি-সংগৃহীত।
apps

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অপহরণের পর মুক্তিপণ না পেয়ে স্কুলছাত্র তানভীর হত্যার সাথে জড়িত ঘাতক উজ্জল ও শান্ত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তারা আদালতে লোমহর্ষক এ ঘটনার বর্ণনা দেন।

ঘাতকদের বরাত দিয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনার শুরু দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর আগে। তানভীরের প্রতিবেশী উজ্জল তাদের বাড়ির পাশে সবজি চাষ করত। সেই জমিতে চাষ করা কলা উজ্জল বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। তানভীরের বাবা ফারুক মিয়া উজ্জলকে বলে ‘তুই এই কলা চুরি করে নিয়ে এসেছিস’। এই কলা বিক্রির ঘটনা নিয়ে বাজারে সালিশ হয়। ওই সালিশে ভিকটিমের বাবা ফারুক মিয়া অপমান করে উজ্জলের বাবা সৈয়দ আলীকে। যা উজ্জলের মনে দাগ কাটে। সে কখনোই এই অপমানের ঘটনা মেনে নিতে পারেনি। তার মনের কোনে জমতে থাকে ক্রোধ এবং প্রতিশোধের নেশা যা একসময় বিশাল আকার ধারণ করে।

রবিউল ইসলাম আরও জানান, সৈয়দ আলী তার ছেলে উজ্জলকে ঝামেলা এড়াতে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। ৬ বছর পর দেশে ফিরে আসে উজ্জল। তার মনের কোনে জমে থাকা ক্রোধ এবং প্রতিশোধের নেশা জেগে ওঠে। তিনি বিভিন্নভাবে ছক কষতে থাকেন কিভাবে তার বাবার অপমানের বদলা নেয়া যায়। নসরতপুর রেলগেটে একটি মোবাইল টেলিকমের দোকান দেয়। পরিকল্পনা করে ফারুক মিয়ার একমাত্র ছেলে তানভীরকে অপহরণ করবে। সাজাতে থাকে তার নীল নকশা। উজ্জল এবং জাহিদ তানভীরকে অপহরণের চেষ্টা করে। এ যাত্রায় বেঁচে যায় ভিকটিম তানভীর। এরই মাঝে উজ্জল আরো বিভিন্ন উপায়ে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে জাহিদের মাধ্যমে নীল নকশার অংশ হয়ে উঠে শান্ত।

অতিরিক্ত পুলশি সুপার জানান, গত ২৪ জানুয়ারি উজ্জল, জাহিদ এবং শান্ত তানভীরকে হত্যার ছক কষে। শান্ত উজ্জলকে জানায় তানভীরকে ঘরের বাইরে আনার দায়িত্ব তার। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শান্ত কৌশলে তানভীরকে উজ্জলদের পুকুর পাড়ে ডেকে আনে। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক উজ্জল তানভীরের গলায় সুতা দিয়ে ফাঁস দেয়। শান্ত এবং জাহিদ উভয়েই তানভীরের মুখ চেপে ধরে রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় তানভীর। মৃতদেহটি পাশের মজা পুকুরে তানভীরের হাত পা বাঁধা অবস্থায় লুকিয়ে রাখে।

জাহিদ তানভীরের ব্যবহৃত সিম থেকে তানভীরের বাবার নম্বর সংগ্রহ করে এবং উজ্জলের পরামর্শ অনুযায়ী মুক্তিপণের জন্য ৮০ লাখ টাকা দাবি করে। গত মঙ্গলবার দুপুরে আসামি উজ্জলের বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ডোবা থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বুধবার তানভীরের বাবা পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম নছরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জল মিয়া (২৫), নুরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬), বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। ইতোমধ্যে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শায়েস্তাগঞ্জ থানার (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব বলেন, গ্রেপ্তারকৃত তিনজন ছাড়াও আরও দুইজনের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় এখনি প্রকাশ করা হচ্ছে না।

 

Development by: webnewsdesign.com