শীতকাল আসলে ঠাণ্ডা-জ্বর যেনো পিছু ছাড়ে না। আর ঠাণ্ডা থেকে একসময় জন্ম নেয় ড্রাই কফের। অনেকের এই শুকনো কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তীব্র যন্ত্রনা দেয়। ওষুধের তুলনায় ঘরোয় টোটকায় এই কাশি সহজে সারে।
এক শুকনো কাশি রাতের ঘুম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ঠ। ঘরোয়া অনেক উপাদান আছে যা নিয়মিত ব্যবহারে শুকনো কাশির পরিমাণ কমে। তবে এতে একটু বেশি সময় লাগলেও চিন্তা করার কিছু নেই। শুকনো কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মধু
কাশি সারাতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে মধু। মধু গলা ব্যথা, কাশির সমস্যায় অনেক কার্যকরী। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণে যে ইনফেকশন হয় তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে মধু। শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্য উপযোগী মধু। মধু স্যালিভারি গ্ল্যান্ডকে ট্রিগার করে আর স্যালিভারি গ্ল্যান্ড আরো স্যালিভিয়া উৎপন্ন করে যা শ্বাসনালীকে লুবিক্রেট করতে পারে। এর ফলে কফের পরিমাণ কমে।
নিয়ম
শুকনো কফ থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন দু থেকে তিনবার এক টেবিল চামচ মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়া গরম পানি বা হার্বাল চায়ের সাথে মিশিয়েও মধু খেতে পারেন।
হলুদ
ড্রাই কফ সারানোর আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো হলুদ যাতে কারকিউমিন থাকে। হলুদে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ড্রাই কফের চিকিৎসায় অনেক কার্যকর। প্রাচীনকাল থেকে বাতের ব্যথাসহ অনেক রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছে হলুদ।
নিয়ম
গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে নিন এবং সেই হলুদ দুধ ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন। এতে করে গলায় খুশখুশে ভাব দূর হবে এবং ড্রাই কফও হবেনা।
আদা
আদার অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আদা হলো ড্রাই কফের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। আদা মিউকাস কে পাতলা করে শ্লেষ্মা বের করে দেয়।
নিয়ম
আদা গুড়া করে হাফ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে নিন। এছাড়া আদা রস করে সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন বা চায়ের সাথে আদা দিয়ে খেতে পারেন। খুব বেশি আদা খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে।
ভাপ নেওয়া
ড্রাই কফের অন্যতম চিকিৎসা হলো গরম পানির ভাপ নেওয়া। গরম পানির সাথে আপনি প্রয়োজনে এসেনসিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। গরম পানির ভাপ নাক পরিষ্কার রাখে, গলা ব্যথা কমায় এবং কফের পরিমাণও অনেকাংশে কমিয়ে ফেলে।
নিয়ম
ভাপ নেওয়ার জন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তার সাথে এসেনসিয়াল ওয়েল বা ইউক্যালিপটাস অয়েল বা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিন। গরম পানির ভাপ নেওয়ার আগে মাথা তোয়ালে দিয়ে কভার করে নিন। তবে ভাপ নেওয়ার সময় যদি মনে হয় গরমে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে তবে ভাপ নেওয়া বন্ধ করে দিন।
গরম পানি দিয়ে গার্গল
ড্রাই কফের সমস্যা আসলে চিকিৎসকরা সব সময় গরম পানি দিয়ে গার্গল করার কথা বলেন। এটি শ্লেষ্মা বা কফ বের করে দিতে সাহায্য করে। এতে করে কমে শুকনো কফ।
নিয়ম
এক গ্লাস কুসুম গরম পানি নিয়ে এর মধ্যে হাফ টেবিল চামচ লবণ নিন। গলার ভিতর কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এতে করে গরম পানির ভাপ গলার ভিতর লাগবে। দিনে কয়েকবার গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গরম পানির গার্গলের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাচ্চারা লবণ পানি গিলে ফেললে সমস্যা হতে পারে।
ভেষজ চা
বিভিন্ন ভেষজ দিয়ে তৈরি চা গলা ব্যথার সমস্যা কমায় সেই সাথে সব কফ বের করে দেয়। এর ফলে কমে শুকনো কাশি। এছাড়া ভেষজ চাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা হজম ভালো রাখে।
প্রতিদিন এক কাপ ভেষজ চা খাওয়ার চেষ্টা করুন। স্বাদের জন্য মধু বা লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন।
শুকনো কাশি কমাতে এ খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি কিছু বিষয় এড়িয়ে চলুন।
১.যাদের ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা রয়েছে এমন মানুষদের কাছে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
২.দূষিত বাতাস থেকে দূরে থাকুন। বাড়িতে ইন্ডোর প্ল্যান্ট রাখার চেষ্টা করুন।
৩. ধূমপান করা বাদ দিন কারণ ধূমপান ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর এবং ধূমপান ড্রাই কফ বাড়িয়ে দেয়।
৪. আপনার যদি অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে তবে ক্যাফেইন, অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার ও চকলেট এড়িয়ে চলুন।
৫. প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের চেষ্টা করুন। কারণ না ঘুমিয়ে দুশ্চিন্তা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আর এতে করে শুকনো কফের সমস্যা সারতে অনেক সময় লাগতে পারে।
সূত্র ফেমিনা
Development by: webnewsdesign.com