সুরমা নদী শীতে শুকিয়ে নালায় পরিণত

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

সুরমা নদী শীতে শুকিয়ে নালায় পরিণত
সুরমা নদী শীতে শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়
apps

সুরমা নদী শীতে শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়, আর বর্ষায় দেখা যায় ভয়াবহ রূপ। গভীরতা কমে যাওয়ায় নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে সিলেট শহরে। এতে পানিতে তলিয়ে যায় শহর। পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম ছড়া-খালগুলো দিয়ে উল্টো শহরে প্রবেশ করে সুরমার পানি। গেল বছর দুই দফা বন্যায় নাকাল হতে হয়েছে সিলেট নগরবাসীকে। অবশেষে নগরবাসীকে এ থেকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সুরমা খননের। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমায় ড্রেজার মেশিনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। চলছে ‘ট্রায়াল রান’।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে খনন শুরু হবে। এতে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরবে সুরমার। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নদী খনন করলেই সিলেট নগরীকে বন্যা ও জলাবদ্ধতামুক্ত করা যাবে না, এজন্য অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর মে ও জুন মাসে সিলেট নগরীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। ওই সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সুরমা নদী খনন, শহররক্ষা বাঁধ এবং নদী ও ছড়া-খালের উৎসমুখে স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি তোলা হয়। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপিও এ নদী খননে জোর দেন। এর প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুরমা খননে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

বোর্ড সূত্র জানায়, এর আগে কানাইঘাট থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমা নদী খননের জন্য একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি আলোর মুখ দেখেনি। গেল বছর বন্যার পর কুশিঘাট থেকে ছাতকের লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার খননে আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। নদী খননে ইতোমধ্যে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সুরমা নদীতে ড্রেজার মেশিন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ সিলেটভিউকে জানান, সুরমা নদী খননের ‘প্রি-ওয়ার্ক’ শুরু হয়ে গেছে। ‘ট্রায়াল রান’ হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই খনন শুরু হবে। কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত খনন হলে সুরমার নাব্য বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে পানি প্রবাহ। এতে বর্ষায় সিলেট নগরীতে বন্যার আশঙ্কা কমবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী জুন মাসের মধ্যেই খনন সম্পন্ন হওয়ার কথা। কেবল সুরমা খনন করলেই সিলেট নগরীকে বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতা মুক্ত করা যাবে না। এজন্য নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলোর পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। অনেক সময় নদীতে পানি কম থাকলেও ছড়া ও খালে প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানি নামতে দীর্ঘ সময় নেয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এরপরও এ বছর ছয় সদস্যের একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সেজন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো এ কমিটি চিহ্নিত করে সমাধানের সুপারিশ করবে। সিলেট নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত বড় বড় ছড়া-খালগুলো সুরমা নদীর যেসব পয়েন্টে পতিত হয়েছে, সেসব স্থানে স্লুইস গেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহীদুল ইসলাম জানান, লামাকাজি পর্যন্ত কোথাও ২০ ফুট আবার কোথাও ১৫ ফুট খননের ডিজাইনসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : সিলেটভিউ

Development by: webnewsdesign.com