সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা জামেয়া রেঙ্গার সম্মেলন বুধবার শুরু

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৮:২০ অপরাহ্ণ

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা জামেয়া রেঙ্গার সম্মেলন বুধবার শুরু
apps

বৃহত্তর সিলেটের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপীঠ জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন ২৫ ডিসেম্বর বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ইতিমধ্যে মহাসম্মেলন আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জামেয়ার ১০০ বছরের ইতিহাসে এই সম্মেলন সর্ববৃহৎ ও অতিগুরুত্বপূর্ণ হবে এটাই সিলেটবাসীর প্রত্যাশা। সম্মেলনের জন্য মাদরাসার দক্ষিণে ১ লক্ষ ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের মাঠ ও অন্যান্য স্থানে স্বাভাবিকভাবে ধারণ ক্ষমতা প্রায় লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জামেয়ার কয়েক হাজার ফাযিল, শিক্ষক, দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী, এলাকার সাধারণ মানুষের সহযোগিতা এবং বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি ও পরামর্শ আহুত সম্মেলনকে প্রাণবন্ত করে তুলবে বলেই সবার প্রত্যাশা।

সম্মেলনে আগত মুসল্লিদের জন্য অজু ও প্রস্রাবখানা তৈরি করা হয়েছে মাঠের পাশেই। সম্মেলনস্থলে পৌঁছার জন্য মাঠের পূর্বদিকে রেলালাইনের ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মাদরাসার ৩টি গেইট এবং সম্মেলনস্থলের পশ্চিম দিক থেকেও মাঠে পৌঁছার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯০০ ফিটের ৩ স্তরের মঞ্চের প্রধান মঞ্চ ৩০ ফুট বাই ১৫ ফুট এবং মূল মঞ্চের দুই পাশে ১৫ ফুটের আরও দুইটি মঞ্চ রাখা হয়েছে উলামা অতিথি ও সামাজিক-রাজনীতিক ব্যক্তিদের জন্য। স্টেইজের ঠিক পেছন দিয়ে ১৫ ফিট প্রস্থ যাতায়াত রাস্তার পরেই পুলিশ কন্ট্রোল রুম, মিডিয়া কর্নার, অস্থায়ী মেহমানখানা, আপ্যায়ন এবং বাথরুমের ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বুধবার বিকাল ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১১টায় ৪ অধিবেশনে ১ম দিনের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ২য় দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ২টা থেকে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে ৪ অধিবেশনে রাত ১১টায় সমাপ্ত হবে।২৭ ডিসেম্বর ৩য় ও শেষ দিন সকাল ১০ টা থকে শুরু হয়ে ২৮ ডিসেম্বর ফজর পর্যন্ত মোট ৬ অধিবেশনে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৩দিন ব্যাপী সম্মেলন সমাপ্ত হবে।

সিলেটের ইতিহাসে কওমি মাদরাসা-কেন্দ্রিক এই প্রথম অনুষ্ঠিতব্য এমন সর্ববৃহৎ মহাসম্মেলনে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের শীর্ষ উলামা মাশায়েখ ও ইসলামিক স্কলারগণ বয়ান করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সিলেট-০৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ আলহাজ শফি আহমদ চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনীতিক ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকবেন।

শতবার্ষিকী ও দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন উপলক্ষে একহাজার পৃষ্ঠার বিশাল একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া জামেয়া দীর্ঘ ৫১ বছরের শায়খুল হাদিস আল্লামা শিহাব উদ্দীন রাহ.’র জীবন ও কর্ম নিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠার পৃথক একটি স্মারকগ্রন্থসহ জামেয়ার শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ব্যাচের ফাযিলদের উদ্যোগে ডজনখানেক পত্রিকা-ম্যাগাজিন প্রকাশ হচ্ছে।
স্মারক সম্পাদনা পর্ষদের প্রধান মাওলানা মুখলিসুর রহমান রাজাগঞ্জী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার ইতিহাসে এই প্রথম হাজার পৃষ্ঠার বিশাল কোনোনো স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। ৩০টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত এই স্মারক ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে।

সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা সাহ ইকবাল বিন হাশিম জামেয়ার বিগত ৫৩ বছরের ফাযিল, হাদিসের শায়খসহ প্রায় ৫হাজার নামলিপি একটি খেজুর গাছে অঙ্কন করেছেন, যা দর্শনার্থীদের সহজের দৃষ্টি কাড়বে।

মহাসম্মেলনে সফলে সর্বস্তরের প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়াসহ সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন সম্মেলন ইন্তেজামিয়া কমিটির সভাপতি মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফখরুল ইসলাম।
এদিকে ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শতবার্ষিকী ও দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন সফলের লক্ষ্যে সিলেটে সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বৃহত্তর সিলেটের কওমি মাদরাসাসমূহে এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চলছে নানা প্রস্তুতি। বিগত ৫৩ বছরে জামেয়ায় লেখাপড়া সমাপ্তকারী পৌনে চারহাজার ফাযিলকে সম্মাননা প্রদান এবং শতবছর উদযাপন করতেই দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন। সম্মেলনকে সফল করে তোলার জন্য করে যাচ্ছেন জামেয়ার সাবেক শির্ক্ষাথীরা।

জামেয়ার ৪৮ তম ব্যাচের ফাযিল মাওলানা আব্দুল হামিদ সাকিব সিলেট রিপোটকে জানান, জামেয়া রেঙ্গা বৃহত্তর সিলেটের একটি শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশ ও জাতির কল্যাণে জামেয়ার ফুযালারা প্রশংসনীয় অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা আরকান আলী ও খলিফায়ে মাদানী মাওলানা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রাহ.’র স্মৃতিবিজড়িত, জামেয়ার দীর্ঘ ৫১ বছরের শায়খুল হাদিস, দস্তারবন্দী সম্মেলনের স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা শিহাব উদ্দীন রাহ.’র স্মৃতিচারণ করে বলেন, আধ্যাত্মিক সবক গ্রহণ করতে দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন সফল করতে হবে। মুহাদ্দিস সাহেবের স্বপ্ন পূরণে জামেয়ার ফাযিলরা যেনো ভূমিকা রাখতে পারেন, সেই প্রত্যাশা করি।

বুধবার থেকে শুরু হওয়া মহাসম্মেলন সফলে জামেয়ার ৪৮ তম ব্যাচের উদ্যোগে রবিবার সিলেট নগরীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামেয়ার সম্মেলন সফলে সবার সহযোগিতা চেয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com