কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনার বিচারে আয়োজিত সালিসে অভিযুক্তের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের গজারিয়া ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আব্দুল মতিন (৬৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুলাই পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ বছরের এক মেয়েশিশুকে বাড়ির পাশের আখ ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে একই বাড়ির ফজর আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (৬৫)। আব্দুল মতিন সম্পর্কে মেয়েটির দাদা হয়। ভুক্তভোগী শিশুটি তার পরিবারকে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জানায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মজুমদারকে ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেন ও বিচার চান শিশুটির বাবা।ঈদের পরদিন সোমবার (১১ জুলাই) সকালে ওই গ্রামের জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদ্রাসা মাঠে ধর্ষণে বিচারের প্রকাশ্যে সালিস বসে। গ্রামের সর্দার মিজানুর রহমান, ফিরোজ আহমেদ ভূইয়া, ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার এবং আরেক সর্দার বাবুল মজুমদার ওই সালিসে রায় দেন।সালিশে ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নেয়া হয় এবং ধর্ষক মতিনের স্বীকারোক্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সালিসে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ভুক্তভোগীর পরিবারকে নিষেধ করেন যেন ঘটনার কোন মামলা বা অভিযোগ না দায়ের করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত মতিন ও তার মেয়েকে কল দিলেও তাদের পাওয়া যায়নি।ধর্ষণের বিচার পাঁচ হাজার টাকায় সমাধান করা পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মজুমদারকে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমি অন্যায় করি পেলাইছি (ফেলেছি)। আমনে (আপনি) আসেন, আমনের সাথে গ্রামবাসী নিয়া সরাসরি বসে কথা বলমু। আমি এখন কিচ্ছু বলতে পারমু না।’
ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রীর বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়েছে মতিন। এরপর আমি বিচারের জন্য মেম্বারের কাছে যাই। মেম্বার আমারে বলে ঈদের পরে বিচার হইব। ঈদের পরে আমাদের গ্রামের সরদার মিজানুর রহমান, মজু, বাবুল ও জাহাঙ্গীর মেম্বরসহ কয়েকজন মাদ্রাসার সামনের একটা চা দোকানে প্রকাশ্যে সালিস বসায়। সালিসে প্রথমে তারা মতিনকে ৫০ বার কানে ধরানো ও ১০০ বেতের বাড়ি দেয়ার বিচার করে। পরে আবার তারা নিজেরাই এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে যায়। পরে সিদ্ধান্ত নেয় মতিনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করবে। আমি প্রকাশ্যে বলে দিয়েছি এই এই রায় আমার পছন্দ হয় নাই। আমি রায় মানি না। টাকা দিয়ে আবার এই ঘটনার কী বিচার! এ বিচারের প্রতিবাদ করায় আমার আত্মীয়-স্বজনের ওপর হামলা করেছে তারা। এখনো দুইজন হাসপাতালে ভর্তি। এখন তারা বলতেছে, আহতরা হাসপাতাল থেকে আসলে আবার সালিস হবে। আমি বলছি, হইলে হোক। কিন্তু আমার বিচার পছন্দ না হইলে আমি থানায় যাব।’
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আইয়ুব বলেন, ‘এখনও এমন কোনো বিষয় আসলে শুনিনি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Development by: webnewsdesign.com