৯ দিনে আক্রান্ত ৪৭ হাজার : শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি

বাড়ছে শীতবাহিত রোগব্যাধী

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৫:১৮ অপরাহ্ণ

বাড়ছে শীতবাহিত রোগব্যাধী
apps

জেঁকে বসেছে শীত। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ শীতে কাঁপছে। তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। দেশের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের কনকনে হাওয়া জনজীবন স্থবির করে ফেলেছে। শীতকালীন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বেশি ভুগছে শিশু। ডায়রিয়ায় গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এরপরই রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস। রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বেড়েছে। এই রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে তারা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তথ্য সংরক্ষণ করে। এবার ৬২ জেলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখান থেকে জানা গেছে, গত ৩৬ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ৩ হাজার ৭৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরপর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে ১ হাজার ৬৮২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ২০৩ জন। গত ৯ দিনে ডায়রিয়ায় ১৬ হাজার ৫৭২, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে ৭ হাজার ৩ এবং জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ. জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে ২৩ হাজার ১২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে শীতকালীন রোগব্যাধিতে ৪৬ হাজার ৭০২ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে, দৈনিক চার হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালের বহির্বিভাগে বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার সমকালকে বলেন, শীতকালীন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শীতকালীন রোগের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এবার ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে একক রোগ হিসেবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। এরপরই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের শিকার হয়েছে মানুষ। এছাড়া জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। জেলাভিত্তিক তৈরি করা তালিকায় দেখা যায়, কোনো জেলায় ডায়রিয়া, আবার কোনো জেলায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তবে বিগত বছরগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, নভেম্বর থেকে শীতকালীন রোগের প্রকোপ শুরু হয়। ডিসেম্বরে রোগী বেশি হয়। এর প্রভাব এখন পড়ছে। মার্চে গরম শুরু হলে তখন এসব রোগের প্রকোপ কমে যায় বলে জানান তিনি।

রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান,বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) সরেজমিনে ঘুরে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ৫ হাজার ২০৯ জন আইসিডিডিআর’বিতে ভর্তি হয়েছে। আইসিডিডিআরবি’র ডায়রিয়া ডিজিজ ইউনিটের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজহারুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর শীতের এই সময়ে ডায়রিয়ায় মানুষ অধিকহারে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই হার বেশি। রোটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালেও রোগীর ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ সমকালকে জানান, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ নিয়ে বেশিরভাগ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর সমকালকে বলেন, শীতকালে শিশুদের মধ্যে কমন কোল্ড অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বিশেষ করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি গরম কাপড় পরিধান করলে এটি ভালো হয়ে যায়। এছাড়া শীতকালে পানির সংকট সৃষ্টি হয়। অনেক জায়গায় মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। বিশুদ্ধ পানির অভাবে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। তাই পানি পানের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরাসরি পাওয়া না গেলে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে তা পান করতে হবে। এছাড়া শীতে তাপমাত্রা কম থাকে। তখন কোনো খাবার উন্মুক্ত স্থানে রাখা হলে তাতে রোগ-জীবাণু সহজে বেঁচে থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এ প্রতিেবেদককে বলেন, শীতের কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়াসহ কিছু ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা যায়। বাতাসের আর্দ্রতার পরিবর্তন ঘটে, বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি এবং শিশুদের নিউমোনিয়া হতে পারে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে যতটা সম্ভব ধূলিকণা এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। একইসঙ্গে রোটা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কারণ শীতকালে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। অনেকে বিশুদ্ধ পানি পায় না। তাই পানিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। তাহলে এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।

Development by: webnewsdesign.com