তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, ফাঁকা গুলি

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১:৫৫ অপরাহ্ণ

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, ফাঁকা গুলি
apps

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ করে অতিরিক্ত সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।তা ছাড়া তুমব্রু-বাইশফাঁড়ি সীমান্ত এলাকাজুড়ে স্থাপন করেছে বাঙ্কার ও নিরাপত্তার নামে অসংখ্য চৌকি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বললেন, আতঙ্কের কিছু নেই। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে।সরেজমিন সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু-ভাজাবনিয়া, মগপাড়া, বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ওপারে বিশাল এলাকাজুড়ে অসংখ্য বাঙ্কার এবং নিরাপত্তার নামে চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমার।

সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ভারী অস্ত্র বাংলাদেশের দিকে তাক করে বসানো হয়েছে। রাতে মাঝে মাঝে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।সীমান্তের ঘুমধুম ভাজাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আলী হোসেন জানান, তিনি বোরো ও মরিচ চাষ করেছে সীমান্তের একদম কাছাকাছি স্থানে। তার মাত্র কয়েকশ গজ দূরে বাঙ্কার ও চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা।তিনি বলেন, রাতে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে থাকে। এতে তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।একই কথা আকতার উদ্দিন ও হোসন আহমদসহ অসংখ্য স্থানীয়দের। তারাও জানান, আইসিজের রায়ের পর হঠাৎ এভাবে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার।তারা আরও জানান, সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা, বিজিপি টহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত সপ্তাহ থেকে। ভারী যান নিয়ে প্রতিনিয়ত সীমান্তে যাতায়াত করছে মিয়ানমার বিজিপি ও সেনা সদস্যরা।শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, সকাল থেকে সাতটি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে।সীমান্তের বেড়া বরাবর বাঙ্কারগুলোতেও অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমার সেনারা। সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্ত রক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরাও রয়েছে বলে তারা জানান।তুমব্রু শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আইসিজে রায়ের পর থেকে মিয়ানমার সেনারা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। তাদের সঙ্গে বিজিপির সদস্যদেরও দেখা যাচ্ছে। এতে করে শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, তুমব্রু সীমান্তে ৩৪নং পিলার থেকে ৩৯নং পিলার পর্যন্ত বিশাল সীমান্ত এলাকাজুড়ে মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যরা বাঙ্কার খনন ও চৌকি স্থাপন করেছে।তিনি আরও বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের (আইসিজে) রায়ের পর থেকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড অব পুলিশ (বিজিপি) বাঙ্কার এবং চৌকি স্থাপন করেছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই, সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করে যাচ্ছে।

Development by: webnewsdesign.com