রাজশাহীর পুঠিয়ায় ধর্ষণের শিকার মানসিক ও শারিরিক প্রতিবন্ধী কিশোরী (১৫) ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এদিকে স্বীকৃতি তো দূরের কথা সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর পিতৃপরিচয় নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।
ভূক্তভোগির পরিবার সন্তানের ওপর অমানুষিক এই নির্যাতনের সঠিক বিচারের আশায় এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ভূক্তভোগি উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের দিনমজুরের বড় মেয়ে। অপরদিকে কিশোরীর ধর্ষক সোহেল রানা (৩৫) তিন সন্তানের জনক ও একই ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের আব্দুল কালামের ছেলে।
স্থানীয় এলকাবাসী সুত্রে জানা যায়, সোহেল রানা একটি কোম্পানির হয়ে বিভিন্ন গ্রামের দোকানপাটগুলোতে সেলসম্যানের কাজ করতো। সে সুবাদে ফুলবাড়ি গ্রামের এই রাস্তা দিয়ে সোহেল রানা আসা যাওয়া করতো। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের এক সন্ধ্যায় বসে থাকে মানসিক ও শারিরিক প্রতিবন্ধী কিশোরী বাড়ির পাশে।
রাস্তায় তাকে একা পেয়ে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। এরপর গত ১২ জুলাই রামেক হাসপাতালে খালেদা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।
ভূক্তভোগী কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হলেও তার উপর ঘটে যাওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি তিনি এখনো ভুলেননি। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে আমি পাশের বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়ে ছিলাম। পরে সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হলে আমি বাড়ি চলে আসছিলাম। আসার পথে রাস্তা থেকে সোহেল নামের ওই লোক আমার মুখ চেপে ধরে বিদ্যুতের খুঁটির কাছে নিয়ে যায়। এরপর আমার সাথে সে খারাপ কাজ করেছে। আর এই কথা বললে বাড়িতে যদি মা আমাকে মারে তাই কাউকে বলেনি। এখন আমার একটি মেয়ে হয়েছে। কিন্তু গ্রামের লোক আমার এই ছোট মেয়েকে মানুষের কাছে পালক দিতে বলে। আমি কিন্তু কাউকে দিব না।
ভূক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, আমি খুবই গরীব মানুষ। এলাকার মানুষের জমিতে কাজ করে কোনো মতে দিন যায়। বাড়ির দু’শতাংশ জমি ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। আমাদের পরিবারে দু’টি মেয়ে আছে। এর মধ্যে সে বড়। তাকে পাশের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পেরেছিলাম। কিন্তু তার মাথায় বুদ্ধি অনেক কম থাকায় চেষ্টা করেও প্রাথমিক শেষ করাতে পারেনি। যার কারণে গত দু’বছর থেকে সে বাড়িতেই থাকে।
এরমধ্যে কবে যে তার উপর এ রকম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আমরা কিছুই জানতাম না। মেয়েটাও মুখ খুলে আমাদের কখনো কিছু বলেনি। যখন আমরা বুঝতে পারলাম তখন সে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানার পর সোহেলের পরিবারের সাথে আমরা অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেল ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের কোনো পাত্তা দেয়নি।
পুঠিয়ায় ধর্ষিতা প্রতিবন্ধীর সন্তানের স্বীকৃতি মিলছে না, চলছে সমালোচনা
বরং মাঝে মধ্যে আমাদের পুরো পরিবারেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। গ্রামেও এর কোনো বিচার পাইনি। তাই থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমার মেয়ের কি হবে? তার উপর সে আরেকটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এখন এই বাচ্চার পিতৃপরিচয় ও আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে গ্রামের লোকজন নানা কথা বলছে। এই মেয়েকে নিয়ে আমি এখন চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখছি।
প্রতিবেশী একজন বলেন, কিশোরী প্রতিবন্ধী মেয়েটি খুবই সহজ সরল। সে শারিরিক ভাবে একটু খাটো ও বুদ্ধি কম। তবে সে সব সময় হাসি খুশি থাকতো। আর আশে পাশের শিশুদের সাথে খেলাধুলা করে দিন পার করতো। তার সরলতার সুযোগে সোহেল রানা এই সর্বনাশ করেছে। অপরদিকে সে বিবাহিত। তার পরিবারে স্ত্রী ও তিনটি কন্যা সন্তান আছে। এখন এই মেয়েকে বিয়ে করা তো দুরের কথা সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চার পিতৃ পরিচয় নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন খালেদার পরিবার।
ভালুকগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাকবির হাসান বলেন, ভূক্তভোগী ওই পরিবারটি খুবই অসহায়। মানসিক ও শারিরিক প্রতিবন্ধী ওই কিশোরীর সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা। ধর্ষণের ফলে সে এখন একটি কন্যা সন্তানের মা হয়েছে। ওই বাচ্চার পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতকরণ ও বিষয়টির উভয় এলাকার দু’জন ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে সঠিক সুরাহা করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে আটককৃত সোহেল রানার পিতা আব্দুল কালাম ও তার স্ত্রী সাথে কথা বলতে একাধিকবার তাদের বাড়িতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম বলেন, ভূক্তভোগী পরিবারটি থানায় একটি অভিযোগ করেছিল। আমরা আসামী সোহেল রানাকে আটক করেছি। অপরদিকে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর ও আটককৃত সোহেল রানার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে প্রতিবেদন আসলেই আমরা আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
Development by: webnewsdesign.com