নড়াইলে নির্বাচনী গেজেটে পরাজিত প্রার্থীর নাম

বৃহস্পতিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৩:৪৯ অপরাহ্ণ

নড়াইলে নির্বাচনী গেজেটে পরাজিত প্রার্থীর নাম
apps

নড়াইলের কালিয়ায় নির্বাচনী গেজেটে পরাজিত প্রার্থীর নাম। নির্বাচনে পরাজিত হয়েও গেজেটে জয়ীর তালিকায় নাম আসার ঘটনা ঘটেছে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী ইউনিয়নের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর প্রকাশিত নির্বাচনী গেজেটে এমন ঘটনা ঘটেছে।
সরকারিভাবে প্রকাশিত গেজেটে বিজয়ী প্রার্থী মো. সামিউল শেখের নামের পরিবর্তে পরাজিত প্রার্থী রবিউলের নাম প্রকাশ হওয়ায় বিজয়ী হয়েও গত ২ মাসে শপথ বাক্য পাঠ করতে পারেননি মো. সামিউল শেখ। তিনি চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে প্রিসাইডিং অফিসারের অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে দাবি করেছেন। ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা যায়, চতুর্থ ধাপে গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার ১২টি ইউপির মধ্যে চাঁচুড়ী ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে সামিউল শেখ (ফুটবল), মহাত্তাপ শেখ (টিউবওয়েল) ও রবিউল ইসলাম (মোরগ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াই করেছেন। তাঁদের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় উপজেলার কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন উপজেলার খামার পারোখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ্বাস। ভোট গণনা শেষে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. সামিউল শেখের ফুটবল প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তাঁর ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী মো. সামিউল শেখ ৪৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল ইসলাম মোরগ প্রতীকে ৪৩৩ ভোট পান। কিন্তু গত বছর ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত সরকারি গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যার ১৯৫৩৭ পৃষ্ঠায় বিজয়ী হিসাবে পরাজিত প্রার্থী রবিউল ইসলামের নাম প্রকাশিত হয়।
ঘটনাটি জানার পর কর্তৃপক্ষ চাঁচুড়ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদের শপথ গ্রহণ স্থগিত করেছেন। সে কারণে উপজেলার অন্য ইউনিয়ন গুলোর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে বিজয়ী হয়েও সামিউল শপথ বাক্য পাঠ করতে পারেননি।
সরকারি ভাবে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী মো. রবিউল ইসলাম বলেছেন, কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী তাঁর নাম বিজয়ী হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে। অসুস্থ থাকার কারণে তিনি নির্ধারিত দিনে গত ৬ জানুয়ারি শপথ বাক্য পাঠ করতে পারেননি। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনওর) কাছে আবেদন করেছেন এবং শপথ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন।
নির্বাচনী কেন্দ্রে ঘোষিত ফলাফলে বিজয়ী প্রার্থী মো. সামিউল শেখ বলেছেন, কেন্দ্র থেকে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাঁর সমর্থকেরা আনন্দ মিছিল করেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের গেজেটে তাঁর নামের পরিবর্তে পরাজিত প্রার্থী মো. রবিউল ইসলামের নাম প্রকাশ হওয়ায় তিনি হতবাক হয়েছেন। এরপর তিনি প্রিসাইডিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে ভুল সংশোধনের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। তাঁর নামে সংশোধিত গেজেট প্রকাশের পর তিনি শপথ বাক্য পাঠ করবেন।
কৃষ্ণপুর ডহর-চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিনয় কুমার বিশ্বাস বলেছেন, নির্বাচনের দিন ভোট গণনা শেষে প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে ফলাফলের সঠিক তালিকা দেওয়া হয়। কিন্তু রাতে দ্রুত রেজাল্ট শিট জমা দেওয়ার সময় ভুলবশত পরাজিত প্রার্থী রবিউল ইসলামের নাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য তিনি লজ্জিত ও দুঃখিত। এ ছাড়া ইতিমধ্যেই তিনি বিজয়ী প্রার্থী মো. সামিউল শেখের নাম গেজেটে প্রতিস্থাপনসহ পরাজিত প্রার্থী মো. রবিউল ইসলামের নাম কর্তনের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস সুজন কুমার বলেছেন, বিষয়টিতে প্রিসাইডিং অফিসারে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। তিনি যে রেজাল্ট শিট জমা দিয়ে ছিলেন সে অনুযায়ী গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী প্রার্থী ও প্রিসাইডিং অফিসারের ভুল সংশোধনীর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক নির্বাচিত প্রার্থী সামিউল শেখের নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে। গেজেটটি দ্রুত সংশোধন করে আবার প্রকাশিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

Development by: webnewsdesign.com