স্থাপত্য বিষয়ে একটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ স্বীকৃতি পেয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। স্বল্প খরচে নয়নাভিরাম স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ সৃষ্টি করা এ ভবন নির্মাণে প্রাধান্য পেয়েছে জলবায়ু সহনশীলতা।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস-রিবা মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অসাধারণ নকশা ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটিকে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে। ৮০ শয্যার এ হাসপাতালের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। তিনি এর আগে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
গত ১৬ নভেম্বর এ পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে ছিল জার্মানির বার্লিনের জেমস-সায়মন-গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতুও। ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর সহায়তায় এ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা এই কমিউনিটি হাসপাতাল সাতক্ষীরার হাজারো মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এটি চালু হয়। উপকূলীয় এই এলাকাটি ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরস্কারের জুরি বোর্ড স্থাপনাটিকে একটি ‘মানবিক স্থাপত্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ স্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে, স্থানীয় প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়েছেন। ভবনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। রিবার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কম বাজেটের মধ্যেও স্থাপত্য কীভাবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাকে শক্তিশালী ও সক্ষম করে তুলতে পারে তার উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ হচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
পুরস্কারের খবরে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী বলেছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এই জন্য যে, রিবা এবং এর জুরিরা বিশ্বের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে একটি প্রকল্পকে চিহ্নিত করে বিশ্বের কেন্দ্রে তুলে এনেছেন এবং একে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্ববহ পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
সোয়ালিয়া গ্রামে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই একর জমির ওপর হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর সম্মুখভাগে রাখা হয়েছে বিস্তর খালি জায়গা। তীব্র লবণাক্ততার বিষয় বিবেচনায় পলেস্তারা ছাড়া দেয়াল ও ছাদে শুধু ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ের উপস্থিতি গোটা স্থাপনাটিকে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। সমগ্র স্থাপনায় বিভিন্ন পয়েন্টে নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে মূল নকশার আক্ষরিক বাস্তবায়ন ঘটানো হয়েছে। তিন পাশে ঘিরে থাকা লবণ পানির উপস্থিতির জন্য স্থাপনার মধ্যে লবণাক্ত পানি শোধনে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মনোরম স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের ক্ষেত্রে দুই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জায়গার স্বল্পতা বিবেচনায় নিয়ে সীমানাপ্রাচীরের পরিবর্তে বিভিন্ন অংশে ১০ ফুট প্রশস্ত জলাধারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে আউটডোর ও ইনডোর চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি সুপরিসর করিডোরসহ অডিটোরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যান্টিন আর প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে। এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহিনুর রহমান জানান, ছয়জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্সসহ সাহায্যকারী জনবলের মাধ্যমে সেখানে ২৪ ঘণ্টা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com