কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভ্রমণে আসা এক নারী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি ও হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে দুবার ধর্ষণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।
যদিও পুলিশ বলছে, ধর্ষণের শিকার ওই নারী পতিতাবৃত্তির অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানার হাতে আটক হয়েছিলেন কয়েকমাস আগে। কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউজ এলাকায় আবাসিক কটেজ থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই নারীসহ ৫২ জনকে আটক করা হয়েছিল।
এদিকে ধর্ষণের শিকার পর্যটক নারী আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার আট মাস বয়সী বাচ্চার হার্টে ছিদ্র। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কোথাও কোনো উপায় না দেখে অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে স্বামীসহ কক্সবাজার এসেছি। এখানে গত তিন মাস ধরে অবস্থান করছি। টাকা জোগাড়ে যখন যেখানে ডাক পেয়েছি গিয়েছি। তার চিকিৎসার জন্যই এ কাজ বাধ্য হয়ে করছি। এ সময়ে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়ি। বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদাও দিয়েছি। পরে আবার চাঁদা চাইলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর সূত্র ধরে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে তারা।’
গত শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতে জবানবন্দিতে এসব বলেন ওই নারী।
এদিকে পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীর সাথে আসামি আশিকুল ইসলাম আশিকের পূর্ব-পরিচয় ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় এ সংক্রান্ত জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ
চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নারীর স্বামী। মামলার আসামিরা হলেন; আশিকুল ইসলাম এবং তার তিন সহযোগী আবদুল জব্বার ওরফে ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
আদালতে দেয়া ওই নারীর জবানবন্দির বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারে টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো: জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কারো অসম্মতিতে মিলন করা মানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই নারী যদি তার সন্তান বাঁচানোর জন্য অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত হন এটি তার ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি দাবি করেছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছি। একই সাথে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, ১৬ মামলার আসামি, মাদকসেবক ও মাদক ব্যবসায়ী একজন মানুষের (আশিকের) সাথে বাইরের আরেকজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জিললুর রহমান আরো বলেন, ‘আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
র্যাবের দাবি, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসা এক নারী হোটেলে তিন যুবকের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকত থেকে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে অপহরণের পর হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাত ২টার দিকে র্যাবের একটি দল হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
ঘটনার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী মামুন মিয়া বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা রুজু করেন। মামলার আসামিরা হলেন- কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আবদুল করিমের ছেলে আরিফুল ইসলাম আশিক, মোহাম্মদ শফির ছেলে আব্দুল জব্বার জয়, বাবু ও রিয়াজউদ্দিন ছোটনসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিনজন। এর মধ্যে হোটেল ম্যানেজার রিয়াজউদ্দিন ছোটন গ্রেফতারের পর এখন কারাগারে রয়েছেন।
Development by: webnewsdesign.com