হিলি চেকপোস্ট লাগেজ পার্টিদের অবৈধ পণ্য প্রবেশের নিরাপদ রুট

বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২ | ৩:৩১ অপরাহ্ণ

হিলি চেকপোস্ট লাগেজ পার্টিদের অবৈধ পণ্য প্রবেশের নিরাপদ রুট
apps

দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট ভারতীয় লাগেজ পার্টিদের চোরাচালানির অবৈধ বাংলাদেশে প্রবেশের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা অন্তত ৪০-৪৫ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীর বিরুদ্ধে চোরাচালানির অবৈধ পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিদিন তারা লাখ লাখ টাকার ভারতীয় বিভিন্ন প্রকারের অবৈধ পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। এরপর তারা স্হানীয় বাংলাহিলি বাজারে বিক্রি করে আবার ভারতে ফিরে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকালে হিলি চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায়, চেকপোস্ট গেটে লাগেজপার্টিদের চলছে এই অবৈধ কারবার। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বলা হয় ‘লাগেজপার্টি’। একপ্রকার প্রকাশ্যে এসব হচ্ছে। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।

লাগেজপার্টিরা যেসব ভারতীয় অবৈধ পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তার মধ্যে রয়েছে, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস সামগ্রী, মদ, বিয়ার, গাঁজা, চকলেট, বিস্কুট, মোবাইল ফোনসেট, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ, বিছানার চাদর ও কম্বল, চানাচুর, হরলিক্স, সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, ডায়াপার, জুস ও শনপাপড়িসহ নানা ধরনের ভারতীয় পণ্য। হিলি কাস্টমসে ও বিজিবি পোস্টে স্ক্যানিং মেশিন না থাকায় এসব অবৈধ পণ্য সহজে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে মনে করছেন স্হানীয় সচেতন মহল।

জানা গেছে, করোনা কালিন সময়ে দুই বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার ফলে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্ট-ভিসায় যাত্রী যাতায়াত শুরু হয়। আর এই সুযোগ নিয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ও বালুরঘাটের অন্তত ৪০-৪৫ জন চোরাকারবারী পাসপোর্টে বাংলাদেশি বি-শ্রেণীর ভিসা (বিজনেস ভিসা) লাগিয়ে লাখ লাখ টাকার ভারতীয় অবৈধ পণ্য হিলি চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। আবার সেই পণ্য বাংলাহিলি বাজারে বিক্রি করে ওইদিনই বিকালে বা সন্ধ্যায় ভারতে ফিরে যাচ্ছেন।

এই লাগেজপার্টিরা ১/২ দিন পর পর বাংলাদেশে আসছেন। ৩-৪টি গ্রুপে ভাগ হয়ে এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তারা দুইভাবে বাংলাদেশে অবৈধ মালামাল আনেন। কেউ নিজেরা পুঁজি খাটিয়ে আবার কেউ মহাজনের অধীনে এই কারবারে জড়িত। এই অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের হিলি চেকপোস্টে গড়ে উঠেছে লাগেজপার্টির সিন্ডিকেট।

একটি সূত্র জানায়, দুই দেশের সংশ্লিস্টরা জড়িত না থাকলে কী করে ভারতীয় লাগেজপার্টি নামে এই চোরাকারবারীরা লাখ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য পাচার করে আনেন। তারা বেপরোয়া হয়ে উঠায় সাধারণ পাসপোর্টধারী যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার লাগেজপার্টিরা ভারত থেকে বাংলাদেশি কোনো যাত্রী দেশে ফেরার সময় ওই যাত্রীর ব্যাগে জোরপূর্বক ভারতীয় অবৈধ মালামাল ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।

পরে বাংলাদেশি যাত্রী দেশে প্রবেশ করা মাত্রই ভারতীয় লাগেজপার্টিরা তাদের এপারের এজেন্টকে ফোন করে যাত্রীর নাম বলে দিলে এজেন্টরা যাত্রীর ব্যাগ থেকে মালামাল বের করে নিচ্ছেন। এই কৌশলেও লাখ লাখ টাকার চোরাচালান হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের বিপাকে এবং বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় চেকপোস্টের বাইরে কিছু যাত্রীবেশী লোক আছেন, তারা বাংলাদেশি যাত্রীদের ব্যাগে অবৈধ পণ্য জোরপূর্বক দিয়ে দেন। এমনভাবে দেন, কিছু বলারও থাকে না। ভয়ে ভয়ে সেগুলো নিয়ে আসতে হয়।

এবিষয়ে হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম খান বলেন, হিলি চেকপোস্টে শুরু থেকে যাত্রীদের সুবিধা- অসুবিধা দেখা হচ্ছে এবং সরকার যেন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই ব্যাপারেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সেখানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দায়িত্বে আছেন। আমাদের কঠোরভাবে তাদের নির্দেশ দেওয়া আছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সুবিধা আনতে পারবেন না কেউ। তবে যদি কেউ এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com