সিলেট মাধবপুরে আইপিএল নিয়ে জুয়ায় আসক্ত যুবসমাজ

বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০২০ | ৩:৫০ অপরাহ্ণ

সিলেট মাধবপুরে আইপিএল নিয়ে জুয়ায় আসক্ত যুবসমাজ
apps

হবিগঞ্জের মাধবপুরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুদি দোকান, সেলুন, হোটেল, রেস্তোরা, ক্লাব ও ঘরে বসছে জুয়ার আসর। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় এ আসর দিন দিন জমজমাট হয়ে উঠছে। সবার হাতেই স্মার্ট ফোন থাকায় বিভিন্ন সাইটে লাইভ খেলায় জমে উঠছে জুয়ার আসর। উপজেলার মাধবপুর সবুজবাগ, কলেজপাড়া, নোয়াগাঁও, গোয়ালনগর, কাটিয়ারা সহ ইউনিয়নের গ্রাম্যবাজারগুলোতে বেশির ভাগ খেলা নিয়ে বাজি ধরা হয়। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা পেশাদার জুয়াড়ি। শুধু আইপিএল নয়, তারা সারা বছরই সিপিএল, বিগব্যাশ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বিভিন্ন কাউন্টি ম্যাচ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাজি ধরে থাকেন।

তাদের মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা অধিক লাভের আশায় জুয়ার বিভিন্ন সাইটে টাকার বিনিময়ে ডলার বিনিয়োগ করেন। অনেক সময় এসব সাইটের টাকা অযাচিত কারণে উধাও হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। এভাবে অনেকেই লাভের আশায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। তবুও নেশায় আসক্ত হয়ে বাজি খেলা ছাড়া তারা থাকতে পারেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাটিয়ারা ও সবুজবাগের অলিগলিতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে, টেস্ট, টি-২০ আসর, এমনকি দেশ-বিদেশের ঘরোয়া লিগ নিয়ে নিয়মিত চলে জুয়া। কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় কত রান করবে, কোন বোলার কয়টা উইকেট নেবে- এমন অনেক বিষয় নিয়ে বাজি ধরা হয়।

সাধারণত জুয়ার খেলোয়াড়রা দুইভাবে বাজি ধরে থাকে। প্রথমত, একসঙ্গে কোনো দোকান, সেলুন, হোটেল বা ঘরে বসে জুয়া খেলে। এরা বাজির টাকা নগদ পরিশোধ করে। দ্বিতীয়ত, বাড়ি, অফিস বা অন্যত্র বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচিতদের সঙ্গে বাজি ধরে। এরা টাকা লেনদেন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। জুয়ার টাকার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে হাজারের বেশি পর্যন্ত হয়। প্রতি ওভার কিংবা প্রতি বলেও বাজি ধরা হয়। দোকানদার, সেলুনের নাপিত, ছাত্র সমাজ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন।

এর মধ্যে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বেশি। লোভের বশবর্তী হয়ে দিনমজুর ও প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিজীবীরাও জুয়া খেলছেন। এদের কেউ কেউ বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে ও সুদে ঋণ নিয়ে জুয়ায় অংশ নিয়ে সব হারাচ্ছেন। খেলা শুরুর আগেই জুয়াড়িরা টেলিভিশন বা মোবাইলের সামনে বসে পড়েন। সবার হাতে হাতে থাকে মোবাইল ফোন। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক টাকার লেনদেন নিয়ে মাঝে মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবরও পাওয়া যায়। সচেতন মহলের মতে, আইপিএল জুয়া শুধু উপজেলায় নয়, হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জুয়াতে তরুণ ও যুবকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।

খেলা হচ্ছে বিনোদন। এটি উপভোগ করার মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে। এটি কখনও জুয়ার মাধ্যম হতে পারে না। খেলাকে উপভোগ না করে জুয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলে অনেক বড় অঘটন ঘটতে পারে। সাংবাদিক আলাউদ্দিন আল রনি জানান, যেকোনো ধরণের জুয়া খেলা হারাম। জুয়া মানুষের মস্তিষ্ক খারাপ করে ফেলে। যারা বাজিতে হেরে যায় তারা টাকা খুইয়ে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজেও লিপ্ত হয়। এটি একটি জঘন্যতম অপরাধ। জুয়ায় জড়িত অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের এমনভাবে শাস্তি দিতে হবে যেন অন্যরা আর জুয়ায় আগ্রহ না দেখায়।

এ ব্যাপারে মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি ইকবাল হোসেন জানান, উপজেলার বিভিন্ন দোকানে তাস, লুডু, কেরাম বোর্ডসহ সব ধরণের খেলা বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কোথাও যদি টিভিতে খেলা নিয়ে বাজি ধরা হয় আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তনি আরও বলেন, লুকিয়ে লুকিয়ে বাজি খেললে আমাদের আওতার বাইরে থাকলে আমরা কিছু করতে পারি না। প্রত্যেক তরুণের অভিভাবককে এ ব্যাপারে নজর রাখা উচিত।

Development by: webnewsdesign.com