সুনামগঞ্জে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীকে অপহরণ করে মাসভরা ধর্ষণ

শাল্লা থানায় ওসির বিরুদ্ধে ভিকটিমের পরিবারকে আটকে রাখার অভিযোগ

মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১ | ৫:২৯ অপরাহ্ণ

শাল্লা থানায় ওসির বিরুদ্ধে ভিকটিমের পরিবারকে আটকে রাখার অভিযোগ
apps

সুনামগঞ্জে ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১৪) অপহরণ করে মাসভরা ধর্ষণের ঘটনায় শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলাম ভিকটিমের পরিবারের মামলা না নিয়ে দিনভর থানায় আটকিয়ে রেখে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমনকি আসামীদের সাথে টাকার বিণিময়ে যোগসাজস রেখে ওসি নাজমুল ভিকটিমের পরিবারের মামলাটি রেকর্ড না করে উল্টো অপোষ মিমাংসার হুমকী-দমকী দিয়ে যাচ্ছেন বলে নির্যাতিত পরিবার সূত্রে নিশ্চিত করেছে।

নির্যাতিত ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার ৬ মাস পূর্বে জীবিকার সন্ধানে স্ত্রী-কন্যা পরিবারবর্গদের রেখে সৌদি-আরবে পাড়িজমান সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার সুলতানপুর গ্রামের মো: আনোয়ার হোসেন। গত বছরের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বাড়ি পাশ^বর্তী থেকে একই গ্রামের মো: কুতব উদ্দিনের পুত্র মো: রায়হান মিয়া (১৯) তার সহযোগীদের নিয়ে তার ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রীকে কৌশলে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে রেখে তাকে জোরপূর্বক এক মাস ধর্ষণ করে এক পর্যায়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এমন খবর পেয়ে ভিকটিমের পিতা আনোয়ার হোসেন ২০২০ সালের অক্টোবরে দেশে ফিরেন। এদিকে ভিকটিমের পরিবার বিভিন্ন স্থানে থাকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে অপহরনকারী ধর্ষক রায়হান মিয়ার বাড়িতে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে পাওয়া যায়। সেখান থেকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন আনোয়ার হোসেন।

এর আগে ভিকটিম তার পরিবারকে জানায় ঘুমন্ত অবস্থায় তার পরিবারের সবাইকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে জোরপূর্বক ভিকটিমের কাছ থেকে ১শ’ টাকা স্ট্যাম্পে তার দস্তখত নিয়ে নেয় রায়হান মিয়া। পরে রায়হানসহ তার পরিবারের লোকজন ভিকটিমকে চুলের মুঠি ধরে মারপিট করে এবং তাকে মাটিতে ফেলে তলপেটে লাথি মেরে নির্যাতন করতে থাকে।

এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভিকটিমের পিতা মো: আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে মো: কুতব উদ্দিনের পুত্র ধর্ষণকারী মো: রায়হান মিয়া, মৃত খলিল মিয়ার পুত্র মো: কাশেম মিয়া, তার স্ত্রী মোছা: তফুরা বেগম, অহেদ মিয়ার পুত্র মো: বাবলু মিয়া ও মৃত খলিল মিয়ার পুত্র মো: হাবিবুর মিয়াকে আসামী করে শাল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে থানার ওসি মামলাটি রেকর্ড না করে আসামীদের সাথে যোগযোগ রেখে মাসের পর মাস ঘুষ বাণিজ্য করতে থাকেন।

পরে মো: আনোয়ার হোসেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মোকদ্দমা নং-২০ (১৮-০২-২০২১) ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত/২০০৩) ৭/৩০, ৯ (৯ এর ১)। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন সুনামগঞ্জের আদালতে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। আদালত থেকে এ মামলার তদন্ত করার জন্য শাল্লা থানায় পাঠানো হয়। মামলার আসামী রায়হান মিয়া, কাশেম, বাবলু , হাবিবুর, তোহরা এর পক্ষ থেকে ওসি শাল্লা থানাকে বড় অংকে টাকা দিয়ে উক্ত থানার পুলিশ কর্মকর্তা করিমকে দিয়ে আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে গত ৮ মার্চ সকাল ১০ টায় থানায় আসার কথা বলেন।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থানায় গেলে এই মামলায় আপোষ-মীমাংসা করার বিষয় ওসি নাজমুল আনোয়ারকে প্রস্তাব করেন। আনোয়ার হোসেন আপোষে যাওয়ার বিষয়টি না মানিলে আনোয়ার ও তার স্ত্রীসহ মেয়েকে থানায় আটকে রাখেন শাল্লা থানার ওসি নাজমুল।

এর পর দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়ার সুনামগঞ্জ ক্রাইম রিপোর্টার মেহদী হাসান, আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে তার আটকানোর বিষয়টি রেকর্ডমূলক শিকারোক্তি নেন। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল ইসলাম আনোয়ার হোসেনকে বলেন মামলায় আপোষ করিলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে আপোষ না করিলে তোমাকে ও তোমার স্ত্রীসহ মেয়েকে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করার হুমকি দেন তিনি।

এ ব্যাপারে দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া পত্রিকার প্রতিবেদক শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদেরকে আটকে রাখা হয় নাই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় ডাকা হয়েছে বলে জানান ওসি নাজমুল।

ভূক্তভোগি ভিকটিমের পিতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত থানার একটি রুমে আটকে রাখেন ওসি নাজমুল। তিনি বলেন, কিছুক্ষন পর পর একবার আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় আপোষ করলে ছেড়ে দিবে আবার ওসির পক্ষ থেকে পুলিশ কর্মকর্তা করিম বলেন আপোষ করেন ছাড়া পেয়ে যাবেন। আনোয়ার ও তার পরিবারের এক পর্যায়ে শাল্লা থানা প্রাঙ্গনে নিরুপায় হয়ে কান্নাকটি করতে থাকেন। আনোয়ার বলেন, আমি একজন নিরহ কৃষক গরিব মানুষ বলে আমি কি আমার মেয়ের বিচার পাব না বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। অনোয়ার হোসেন মেয়ে বিচারের আশায় এখন ধারে-ধারে ঘুরছেন।

এদিকে, দিনভর আটকে রেখে বাংলাদেশ মিডিয়া পত্রিকার অনলাইনে ‘আটকে’ রাখার বিষয়ের সংবাদটি প্রচার হলে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওসি নাজমুল আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন এবং মোবাইলে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে মামলার বাদি আইনজীবী অসিত কুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করে মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মো: আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে (যার মোকদ্দমা নং-২০/ ২০২১) নং মামলা দায়ের হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন, এখনও মামলাটি রেকর্ড হয়ে আদালতে আসেনি বলেন জানান এই আইনজীবী।

 

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/ফলোআপ-০৯

Development by: webnewsdesign.com