রাবিতে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ

শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০ | ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

রাবিতে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ
apps

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্কুল এন্ড কলেজে ‘বিধি বহির্ভূত’ সার্ভিস কাউন্ট করার চেষ্টার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক রুনা লায়লা। সংবাদটি স্কুলের সভাপতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ করা হলেও রুনা লায়লা ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও মানহানির’ অভিযোগ করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর মতিহার থানায় ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এর বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি মর্তুজা নুরের নামে অভিযোগটি দায়ের করেন অর্থনীতির ওই শিক্ষক। বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার এস আই মাজেদ আলী জানান, অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ প্রতিদিনের রাবি প্রতিনিধি মর্তুজা নুর তার ফেইসবুক আইডি থেকে ‘রাবিতে বিধিলঙ্ঘন করে শিক্ষিকাকে পদোন্নতি দেওয়ায় আইইআর পরিচালকের পদত্যাগ’ শীর্ষক একটি সংবাদ শেয়ার করেন। যে সংবাদটি নির্জলা মিথ্যা, বিদ্বেষ প্রসূত ও হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রুনা লায়লার দাবি, তিনি পদোন্নতি প্রাপ্তির জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর কখনো আবেদন করেননি। তার পরিবার ও উপাচার্যের মানসম্মান ভূলণ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রও দাবি করেন তিনি।

অথচ বিধিলঙ্ঘন করে রুনা লায়লার পূর্বের সার্ভিস কাউন্ট-এর অনুমোদন দিতে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ তুলে স্কুলের সভাপতি এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক গোলাম কবীর।

তিনি বলেন, রুনা লায়লা আগের সরকারি চাকরির ছাড়পত্র জমা না দিয়েই বিশ^বিদ্যালয় স্কুলে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। প্রোপার চ্যানেলে সার্ভিস কাউন্টের জন্যে আবেদন না করায় একবার তার আবেদন নাকচও হয়। পুনরায় তার আবেদনটির অনুমোদন নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আমার বাদানুবাদ হয় এবং বিষয়টি বিধিবহির্ভূত হওয়ায় ২৪ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়, রাবি স্কুল ও কলেজের শিক্ষিকা রুনা লায়লা আগের সরকারি চাকরির ছাড়পত্র জমা না দিয়েই চাকরি নেন। পরে পদন্নোতির জন্যে পূর্বের সার্ভিস কাউন্টের আবেদন করেন। এটি বিধিবর্হিভূত হওয়ায় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, স্কুলের সভাপতি ও আইইআর পরিচালক এবং স্কুলের অধ্যক্ষ এই আবেদন নাকচ করে দেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ওই শিক্ষিকাকে পদোন্নতি দিতে ফের উপাচার্য আব্দুস সোবহান চাপ দেয়ায় গত ২৪ নভেম্বর আইইআর পরিচালক অধ্যাপক গোলাম কবীর পদত্যাগ করেন।

এই সংবাদটিকেই হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পরিবার ও উপাচার্যের মানসম্মান ভূলণ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে পরিবেশন করা হয়েছে দাবি করে অভিযোগ দায়ের করেছেন রুনা লায়লা।

অভিযোগে রুনা লায়লা দাবি করেছেন, তিনি পদোন্নতি প্রাপ্তির জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর কখনো আবেদন করেননি। তবে যোগদানের সময় সরকারি চাকরি করার তথ্য গোপন রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। বলছেন, চাকরি হবে কি না, আবার যদি বেতনটাও বন্ধ হয়ে যায়, সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি তথ্যটি উল্লেখ করেননি। এখন সুযোগ থাকায় সরকারি চাকরির বিষয়টি উপস্থাপন করে সার্ভিস কাউন্টের আবেদন করেছেন। সার্ভিস কাউন্ট করা হবে কি না সেটা প্রশাসনের বিষয়। হতেই হবে এমনও কথা নেই। তিনি আবেদন করেছেন মাত্র। নিয়ম বহির্ভূত হলে তার সার্ভিস কাউন্ট করা হবে না।

এদিকে সার্ভিস কাউন্ট আর পদোন্নতির বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলছেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পূর্বের সার্ভিস কাউন্ট করার নিয়ম রয়েছে। তবে নতুন চাকরিতে যোগদানের সময় ছাড়পত্র জমা দিতে হবে। সার্ভিস কাউন্ট হলো নতুন কর্ম মেয়াদের সঙ্গে আগের কর্ম মেয়াদ যোগ হওয়ার নিয়ম। যা পদোন্নতি পেতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। বলা যেতে পারে পদোন্নতি প্রাপ্তির প্রাথমিক পর্যায় হলো সার্ভিস কাউন্ট।

এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্যাম্পাসে কর্মরত সংবাদকর্মীরা। তারা বলছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে সেটি সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু অভিযোগকারী শিক্ষক রুনা লায়লা তা না করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় চরম আঘাত।

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্বার্থে অভিযোগটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহারের জন্য অভিযোগকারী শিক্ষককে আহ্বান জানিয়েছেন সংবাদকর্মীরা।

Development by: webnewsdesign.com