রংপুর মেডিকেল কলেজে দুই মাসে দ্বিগুণ বেড়েছে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষা

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ৪:৪০ অপরাহ্ণ

রংপুর মেডিকেল কলেজে দুই মাসে দ্বিগুণ বেড়েছে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষা
ছবি: সংগৃহীত।
apps

রংপুরে গত দুই মাসে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দুই মাসে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক ল্যাবে ৩০০ শতাধিকের বেশি নারীর ধর্ষণের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। আগে এ সংখ্যা অর্ধেকের চেয়ে কম ছিল। ধর্ষণের পরীক্ষা দ্বিগুণ হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা মনে করছেন নারীরা আগের চেয়ে সাহসী হয়েছে। আগে তাদের ওপর নির্যাতন হলে ভয়ে প্রকাশ করতো না। এখন নারীরা ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন না। তাই অভিযোগ ও পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে ধর্ষণের ফরেনসিক রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া গেলেও যেসব ঘটনায় ডিএনএ টেস্ট করা প্রয়োজন তার রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসের আগে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩টি ধর্ষণের ঘটনার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হত। গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৮টি ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত দুই মাসে ৩০০ বেশি নারীর ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা আগে বেলা ২ থেকে আড়াইটার মধ্যে বাড়ি যেতে পারতো। ধর্ষণের পরীক্ষা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বাড়ি যেতে এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

রমেক ফরেনসিক বিভাগের ৪ জন নিয়মিত চিকিৎসক, একজন বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষানবীশ চিকিৎসকরা এখন ফরেনসিক বিভাগে হিমসিম খাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফনেসিক বিভাগে একজন সিনিয়র এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও একজন প্রফেসরের পদ খালি রয়েছে। দ্রুত ওই পদ দুটি পুরন করা হলে ধর্ষণের পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট আরো দ্রুত পাওয়া যেত। এখন ধর্ষণের ডাক্তারির পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। তবে ডিএনএ টেস্ট ও অন্যান্য প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হলে রিপোর্ট পেতে কয়েক মাস লেগে যায়। ফলে বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এদিকে সম্প্রতি রংপুরে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ সদস্য, মাদ্রাসা শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন ধর্ষককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা ওই সব মামলার দ্রুত ফরেনসিক রিপোর্ট প্রদান ও বিচারের দাবি করেছেন। চিকিৎসকরা বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসকরা খুন, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের মামলার বিষয়ে আদালতকে সাহায্য করে। যাতে বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার পায়। ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়। বিচারের রায় চিকিৎসকদের সাক্ষির ওপর অনেকটা নির্ভর করে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.মোঃ রাজিবুল ইসলাম বলেন, নির্যাতিত নারীরা আগে লজ্জায় ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করতো না। সিলেটসহ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচার এবং ধর্ষণের নতুন আইন হওয়ায় নারীরা আগের চেয়ে সাহসী হয়েছে। তারা এখন ধর্ষণের অভিযোগ করতে ভয় পায় না। তাই গত দুই মাসে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দ্বিগুণের বেশি ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com