কোকেনের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম । ভৌগোলিক অবস্থান এবং পাচারের বিশেষ সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক ড্রাগ মাফিয়া চক্রের হোতারা চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে কোকেনের নতুন আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করায় শঙ্কিত চট্টগ্রামের প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক ড্রাগ পাচার চক্রগুলো মাদক পরিবহনের পারিশ্রমিকের বিনিময় হিসেবে অর্থের পরিবর্তে চালান থেকে কিছু মাদক দিয়ে দেয়। বহনকারীরা বিনিময়ে পাওয়া সেই মাদক স্থানীয় মার্কেটে বিক্রি করে। তাই এ দেশের মাদক সেবনকারীদের মধ্যে কোকেনের আসক্তি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইয়াবার চেয়ে ভয়ংকর মাদক মনে করা হয় কোকেনকে। লোকজন কোকেন আসক্ত হয়ে পড়লে পরিস্থিতি হবে ইয়াবার চেয়ে ভয়াবহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই কোকেনের চালান তৃতীয় কোনো দেশে পাচার করা যায়। কারণ এ দেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের
কোকেনের বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ করে না অন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সুযোগটা কাজে লাগাতেই ড্রাগ মাফিয়ারা ট্রানজিট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবুল আলম বলেন, দুই মাসের ব্যবধানে কোকেনের দুটি চালান আটক করেছে র্যাব। এ দুটি চালান আটকের পর কোকেনের বিষয়ে র্যাব গভীরভাবে তদন্ত করছে। এরই মধ্যে কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে। তদন্তে দেশে কোকেন ব্যবহার হচ্ছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আবার মাদক মাফিয়ারা এ দেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে এমনও শক্ত প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তাই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলার মতো তথ্য আমাদের কাছে নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত মরণনেশা কোকেনের উৎপাদন বা বেচাকেনার রেকর্ড প্রশাসনের কাছে নেই। এমনকি কোকেন আসক্ত হয়ে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ারও ইতিহাস নেই।
কিন্তু গত দুই মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম থেকে দুটি কোকেনের চালান জব্দ করেছে র্যাব। এ চালান দুটির সঙ্গে গ্রেফতার ব্যক্তিরা কোকেন এ দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন কোনো তথ্যও জানাতে পারেননি। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধারণা করছেন, আন্তর্জাতিক ড্রাগ মাফিয়ারা ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে কোকেনের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশে কোকেন গ্রহণ করে এমন কাউকে এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যতটুকু জানা গেছে, ড্রাগ মাফিয়ারা চট্টগ্রামকে মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। সাধারণত পেরু ও বলিভিয়া থেকে নানা দেশ হয়ে কোকেন বাংলাদেশে এসে প্রবেশ করছে। এরপর তৃতীয় কোনো দেশে তা পাচার হচ্ছে। ১৬ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানাধীন টাইগারপাস এলাকা থেকে কোকেনসহ বখতেয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এ সময় তার কাছ থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা সমমূল্যের কোকেন জব্দ করা হয়। গ্রেফতারের পর বখতেয়ার জানান, তিনি কোকেন চালানটি হাতবদলের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ২৫ নভেম্বর নগরীর হালিশহর থানাধীন বড়পোল এলাকা থেকে প্রায় এক কেজি কোকেনসহ আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর র্যাব জানায়, আন্তর্জাতিক ড্রাগ চক্রের কাছ থেকে আনোয়ার ওই কোকেনের চালান সংগ্রহ করে। তা আরেক চক্রের কাছে হাতবদল করার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর কয়েক দিন আগে ব্রাজিলের সান্তোষ থেকে জাহাজে করে কোকেনের বড় একটি চালানের খবর আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। ওই খবরের ভিত্তিতে গভীর সমুদ্রে যৌথ অভিযানও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাওয়ার আগেই ওই চালান খালাস হয়ে যায়। এর আগে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেনের বৃহৎ একটি চালান ধরা পড়ে।
বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী তেলের আড়ালে ওই চালানটি আনার অভিযোগ ওঠে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশে ১০৭ ড্রাম তেলের দুটি ড্রামে কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
Development by: webnewsdesign.com