প্রকৃতিকন্যা জাফলং যেন যৌবন ফিরে পেল

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২১ | ২:১৮ অপরাহ্ণ

প্রকৃতিকন্যা জাফলং যেন যৌবন ফিরে পেল
জাফলং, ছবি-সংগৃহীত।
apps

এ যেন দানবের আক্রমণ। এক-দু’বার নয়, বছরের পর বছর ক্রমাগত খুবলে খেয়েছে। উচ্চ আদালত রক্ষাকবচ হলেও পাথরখেকোদের অপতৎপরতা পুরোপুরি থামানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি নিজেই তৎপর হয়েছে প্রকৃতিবিনাশীদের মোকাবিলায়। মহামারি করোনায় মানুষ যখন গৃহবন্দি, পাথরখেকোদের তৎপরতাও বন্ধ, এই সুযোগে প্রাণ ফিরেছে প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের। চারদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়-টিলার মাঝে পাথররাজ্যের মোহনীয় সৌন্দর্য আবারও হাতছানি দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে জাফলংকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরও কোয়ারি থেকে পাথর-বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। সীমান্তের ওপারের পাহাড় থেকে অবিরাম প্রবহমান জলধারার সঙ্গে আসে ছোট-বড় পাথর। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ শীতল জল আর পাথরের মিতালি পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। সৌন্দর্যের সেই লীলাভূমিতে অবৈধ বোমা মেশিন, শ্যালো মেশিন ও পেলোডারের মাধ্যমে চলেছে তাণ্ডব। এই ধ্বংসযজ্ঞ পিয়াইন নদীর সীমানা ছাড়িয়ে আশপাশের লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়েছে। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সংবাদ সম্মেলন করে ইসিএ ঘোষিত জাফলংয়ের প্রায় ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষার দাবি জানায়। এর আগে বেলার পক্ষ থেকে আইনি লড়াইয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার ২০১৫ সালে জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ডাউকি নদীর পূর্ব পাড়ে চুনাপাথর টিলাকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পিয়াইন নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য পাথর। পরিবার নিয়ে জাফলংয়ে বেড়াতে আসা ব্যাংকার দীপ্তি রানী সরকার বলেন, জাফলংয়ের মূল আকর্ষণ পাথররাজ্য। চারদিকে সবুজের মাঝে পাহাড়ি নদীতে পাথরের সমাহার দেখেই মন ভরে যায়। সবাই মিলে খুব উপভোগ করছি। স্থানীয় বাসিন্দা মনোহর আলী বলেন, অনেকদিন পর জাফলং আগের সৌন্দর্যে ফিরেছে।

প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা শীত ও বর্ষায় ভিন্ন রূপে হাজির হয়। অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই দুই মৌসুমে পর্যটকেরও ভিড় বাড়ে। কিন্তু পাথরখেকোদের অপরিকল্পিত খোড়াখুড়িতে এই সৌন্দর্য বিলীন হতে চলেছিল। শুস্ক মৌসুমে পাথররাজ্যের ধু-ধু বালুকাবেলা বর্ষায় স্বচ্ছ জলরাশিতে তলিয়ে যায়। সম্প্রতি জাফলং স্বরূপে ফেরায় আবারও পর্যটকদের টেনে আনছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী খলিল মিয়া। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক দিন সবকিছু বন্ধ ছিল। এখন আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে স্থানীয়দের অর্থনীতির চাকাও ঘুরছে।

সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। করোনাকালীন অবসরে প্রকৃতি তার রূপ ফিরে পাচ্ছে। তিনি বলেন, সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ জলরাশির পাশাপাশি জাফলংয়ের প্রধান আকর্ষণ ছোট-বড় পাথর। পাথরখেকোদের থাবায় জাফলংয়ের এই সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছিল। এক্ষেত্রে করোনা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তিনি ইসিএ ঘোষিত এলাকা দ্রুত সংরক্ষণের দাবি জানান।

জাফলংয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ সুস্থ হয়ে ওঠায় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার আরও উন্মুক্ত হবে বলে মনে করেন আব্দুল হাই আল হাদী। তিনি বলেন, প্রকৃতি নিজেই জাফলংয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এখন প্রশাসনসহ সংশ্নিষ্ট সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে আবারও প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি হয়ে উঠবে জাফলং।

Development by: webnewsdesign.com