নড়াইলে হাত-পা অচল রুমকি এইচএসসিতে ভালো ফল করেও ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায়!
বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
নড়াইলে হাত-পা অচল রুমকি এইচএসসিতে ভালো ফল করেও ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। ছোটবেলায় রুমকিকে পড়াশোনা করাতে চাননি তাঁর মা-বাবা। তবে মেয়ের জোরাজুরিতেই তাঁকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হাত-পা অচল হলেও রুমকির শ্রবণ ও মেধাশক্তি প্রখর। এ বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পেয়েছেন রুমকি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর সব কয়টিতে এ প্লাস পেয়েছেন তিনি। তবে ভালো ফল করেও ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে রুমকির পরিবার। রুমকি উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী গ্রামের আবদুর রউফ মোল্লা ও আবেদা সুলতানার মেয়ে। লোহাগড়া উপজেলার আমাদা আদর্শ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই রুমকি মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের ২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে একাই জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এসএসসিতে জিপিএ-৩ দশমিক শূন্য ৬ এবং জেএসসিতে পেয়েছিলেন ৩ দশমিক ৭৫। এসএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ কম থাকায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ হয়নি।
জন্ম থেকেই রুমকি প্রতিবন্ধী। তাঁর দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ও শুকনো। কোনো হাতে–পায়ে শক্তি নেই। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। গোসল, খাওয়াসহ সব কাজেই তাঁকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। ছোটবেলায় রুমকি বাম হাতে কলম ধরে বাম পায়ের সহযোগিতায় লিখতেন। তবে বড় হওয়ার পর বাম হাতে কলম ধরে ডান হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে লেখেন। তারপরও রুমকির হাতের লেখা বেশ সুন্দর। মুখে কলম ধরে ছবিও আঁকেন তিনি। রুমকি বলেন, ছোটবেলা থেকে তাঁর স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রথম পছন্দ। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চান তিনি। বাবা–মায়ের সঙ্গে রুমকি বাবা–মায়ের সঙ্গে রুমকি রুমকির বাবা আবদুর রউফ মোল্লা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মা আবেদা সুলতানা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে রুমকি মেজ। বড় ভাই রেজওয়ান ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ছোট বোন রুবাইয়া খএসএসসি পরীক্ষার্থী। রুমকির মা আবেদা সুলতানা বলেন, রুমকির এইচএসসির ফলাফলের পর বাড়ির সবাই বেশ খুশি। রুমকি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। ভ্যানে বা অন্য পরিবহনে করে নিয়ে রুমকিকে ক্লাসরুমের বেঞ্চে বসিয়ে দিতে হয়। এভাবে প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছেও এভাবে যাওয়া কষ্টকর। বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক আনার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তাই রুমকি কখনো প্রাইভেটও পড়েনি। আবেদা সুলতানা বলেন, ‘মেয়ের খুব ইচ্ছা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই। আর রুমকির জন্য খরচ বেশি হবে। এভাবে সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন রুমকি এভাবে সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন রুমকি বাবা আবদুর রউফ মোল্লা বলছিলেন, শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ছোটবেলায় রুমকির পড়শোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার কাছে আমরা হার মেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আরও নানা প্রতিবন্ধকতা হবে।’
রুমকির কলেজের শিক্ষক ফরহাদ খান বলেন, রুমকি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। তাঁর শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও তাঁর লেখা স্পষ্ট ও সুন্দর। সহায়তা পেলে মেয়েটি ভালো করবে।