নরসিংদীতে যুবককে প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অপহরণ: মুক্তিপণ দাবি

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯:২৮ অপরাহ্ণ

নরসিংদীতে যুবককে প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অপহরণ: মুক্তিপণ দাবি
apps

নরসিংদীতে এক যুবককে প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। পরে তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিষয়টি লিখিতভাবে র‌্যাব-১১ সদর দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী রাসেল হাসান। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে তিনি।

অভিযোগে রাসেল জানান, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠায় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিবারকে না জানিয়ে মন্টিকে বিয়ে করেন তিনি। ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সৌদি আরবে চাকরি নিয়ে চলে যান। বিদেশ গিয়ে বাবা আবদুল হককে বিয়ের কথা জানান রাসেল। পরে পুত্রবধূ মন্টিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান রাসেলের মা-বাবা। গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ফেরেন রাসেল। এক মাস থাকার পর গত বছরের মে মাসে আবার সৌদিতে চলে যান তিনি।

সৌদি যাওয়ার পর রাসেলকে তার স্ত্রী মন্টি জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু রাসেলের মা-বাবা জানান, মন্টি তাদের না জানিয়ে নরসিংদীতে তার বাবার বাড়ি চলে গেছেন। যাওয়ার সময় গহনা, মোবাইল নিয়ে গেছেন। এ খবর পেয়ে রাসেল গত ১৩ সেপ্টেম্বর আবার দেশে আসেন। মন্টির বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন, তার গর্ভপাত হয়েছে। এর চারদিন পর নরসিংদী সদর থানায় রাসেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন মন্টি আক্তার।

রাসেল অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, ওই মামলার পর নানাভাবে রাসেলকে হয়রানি করতে থাকেন মন্টির পরিবার। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে ডিবি পরিচয় দিয়ে পাপ্পু মিয়াসহ কয়েক ব্যক্তি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে সিটের নিচে নিয়ে মারধর করা হয়। তৃষ্ণায় আমি পানি চাইলে সেভেন আপ দেয়া হয়। কিন্তু সেভেন আপ পানের পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

রাসেল বলেন, চেতনা ফেরার পর দেখেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তিনি একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে আছেন। এর কিছুক্ষণ পরই রাসেলকে পেটানো শুরু করেন পাপ্পু। পরে পাপ্পুর বন্ধু অভিকও মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে মারধরের ভিডিও ধারণ করে রাসেলের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। ওই ভিডিও দেখে দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। রাতে বিকাশে ৬০ হাজার টাকা পাঠায় রাসেলের পরিবার। বাকি ৯০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধের কথা হয়। এই টাকা নিতে ২৯ ডিসেম্বর রাতে রাসেলকে মাইক্রোবাসে তুলে পাপ্পু ও তার দলের লোকজন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাইক্রোবাসটি নরসিংদী শাপলা চত্বরে আসার পর অপহরণকারীরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নামেন। রাসেলকেও নামানো হয়। একটি পিকআপ ভ্যান ওইখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাসেল চিৎকার শুরু করেন। তখন অপহরণকারীরা তাকে রেখেই দ্রুত পালিয়ে যান। এরপর রাসেল পুরো রাত নরসিংদী রেলস্টেশনে কাটান। পরদিন সকালে কুমিল্লায় বড় বোনের কাছে চলে যান। সেখানে মুক্তি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। গত বুধবার তিনি র‌্যাব-১১ সদর দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নরসিংদীর বানিয়াছল মালিপাড়া এলাকায় মন্টি আক্তারের বাবা বাদল মিয়ার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার তিন মেয়ে, দুই ছেলে। এরমধ্যে ছোট ছেলে কারাবন্দী।

এক মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, গেঞ্জি ও ফুলপ্যান্ট পরা এক যুবকের দুই হাত কোমরের পেছনে বাঁধা। পা দুটিও হাঁটুর নিচ থেকে বাঁধা। মুখ বাঁধা কালো কাপড়ে। মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে ওই যুবকের পায়ের গোড়ালিতে একের পর এক আঘাত করছে এক ব্যক্তি। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করছেন ওই যুবক। পাশ থেকে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছেন আরেকজন। দু-তিনবার আঘাতের পর ওই যুবককে বলা হচ্ছে, ‘১০ লাখ টাকা নিয়ে আয়।’ এরপর আবার লাঠির আঘাত। কিছু সময় পর ওই যুবকের মাথা পা দিয়ে চেপে ধরে পুনরায় লাঠির আঘাত। আবার বলা হয়, ‘১০ লাখ টাকা নিয়ে আয়।’

নরসিংদী সদর থানার ধর্ষণ মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইমরান হাসান জানান, রাসেলেকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুটি মোবাইল থেকে ধর্ষণের দৃশ্য উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এসআই আরো বলেন, মারধর ও মুক্তিপণের ঘটনা রাসেল হাসান পুলিশকে জানায়নি।

র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত এসপি আলেপ উদ্দিন বলেন, রাসেল হাসানের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

Development by: webnewsdesign.com