ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় শিশুসন্তানসহ কারাগারে গৃহবধূ

বুধবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ | ৩:০৩ অপরাহ্ণ

ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় শিশুসন্তানসহ কারাগারে গৃহবধূ
ছবি:প্রতিকী
apps

ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় শিশুসন্তানসহ গৃহবধূকে কারাগারে যেতে হয়েছে। রোববার রাতে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। এ নিয়ে ‘বীজ’ এনজিওর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

মানবিক কারণে নিলুফাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তারা। দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের নিলুফা দেড় বছর আগে বীজ এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন। সেই টাকায় জিনিসপত্র তৈরি করে তিনি বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণে সালাম ও নিলুফা দম্পতির আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে পুঁজিও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এনজিও কর্মীরা নিলুফার কাছ থেকে টাকা আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠে। নিলুফার কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া চেক ডিজঅনার করে তা দিয়ে তারা আদালতে মামলা করে। এরপর আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

নিলুফার স্বামী আব্দুস সালাম জানান, সাংসারিক নানা দায়-দেনা মেটাতে আর করোনায় কাজকর্ম বন্ধ হওয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনি। এ ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে কিছুদিন আগে আমি হৃদরোগে আক্রান্ত হই। প্রায় দেড় মাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। দিনমজুরি করে আমরা এ ঋণের টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু ঋণের সুদ বাড়তে থাকায় টাকার অঙ্ক কমেনি। আর সুদসহ এ টাকা আদায়ে এনজিও নিলুফার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঋণ দেওয়ার আগে বীজ এনজিও কর্মীরা গ্রাহককে ব্যাংক হিসাব খুলতে বাধ্য করে। এরপর ওই হিসাবের চেকের পাতায় আগাম সই নিয়ে নিজেদের কাছে রাখে। কোনো গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে চেকে ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসিয়ে তারা ডিজঅনার করায়। এরপর মামলা করা হয়। তবে যাতায়াতের টাকা না থাকায় আদালতে হাজিরা দিতে পারেননি নিলুফা। এ বিষয়ে বীজ এনজিওর দুর্গাপুর উপজেলা ম্যানেজার মাহিরুল ইসলাম কথা বলতে রাজি হননি। ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমোদন এনজিওটির আছে কিনা তা জানা যায়নি। দুর্গাপুর থানার ওসি হাসমত আলী বলেন, এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা আসায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তবে নিলুফার কোলে শিশুসন্তান থাকায় মানবিক কারণে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়নি। তাদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে রাখা হয়েছিল এবং শিশুটিকে গরম কাপড় দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারীকালে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ঋণের কিস্তি তুলেছে রাজশাহীর অধিকাংশ এনজিও। দু-একটি এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সরকারি অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশেরই অনুমোদন নেই। এরপরও গ্রামাঞ্চলে দেদার দাদন স্টাইলে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আবার ঋণের টাকা আদায়ে তারা চেক ডিজঅনার কৌশলকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।

Development by: webnewsdesign.com