শত কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও নির্মাণে ধীরগতি ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যথাযথভাবে কাজ না করে দায়সারাভাবে কাজ করছেন ঠিকাদার, তদারকিতেও নেই কেউ। সড়কে অনিয়ম ও নির্মাণে ধীরগতির ফলে ভোগান্তিতে রয়েছে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, কাজের শুরুতে কিছু অনিয়ম থাকলেও এখন নেই। এরপর কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেনি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এ জেলার সড়ক ও সেতু ব্যবস্থার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে লক্ষ্মীপুর- ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক।
এ সড়ক বাস্তবায়নে সরাসরি সুফল ভোগ করবে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। সড়কের বরিশালের চরকাউয়া থেকে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্মীপুর অংশে রয়েছে মজু চৌধুরীরহাট ফেরিঘাট-লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি। আর এ কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইনউদ্দিন লিমিটেড; কাজটি করছেন ইস্কান্দার মির্জা শামীম। দুই বছরের মধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হবে মার্চে। কিন্তু পুরো রাস্তায় ঠিকমতো কাজ করছে না ঠিকাদার। তাদের মনমতো কাজ করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ী আবুল বাসার, মহি উদ্দিন, হুমায়ন কবির ট্রাকচালক আবুল কালাম বাসচালক হোসেন আহমদ জানান, সাববেইজের অনুপাত হবে ৭০ ভাগ খোয়া ও ৩০ ভাগ বালুর সংমিশ্রণে। কিন্তু এখানে নির্ধারিত বালু না দিয়ে ভিটি বালু ও নিম্ন্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। মেকাডমে ৮০ ভাগ যা আমদানিকৃত কালোপাথর ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও এখানে আমদানিকৃত পাথরের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেইজ-২ এ মেকাডম করতে ৮০ ভাগ ইটের খোয়া ও ২০ ভাগ সিলেটসেন্ট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও এখানে নিম্নমানের ইটের খোয়া ও ভিটি বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্টকইয়ার্ডে বেসিক প্ল্যান্ট বসিয়ে বেইজ কোর্স এবং ওয়্যারিং কোর্স করার কথা। কিন্তু তার করা হয়নি। তবে এসব বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ কোনো কথা বলতে রাজি না হলেও লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক বলেছেন, কাজের শুরুতে কিছু অনিয়ম থাকলেও এখন নেই। এরপর কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা করছেন তিনি।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং ধীরগতিতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি বলেন, সড়কের অনিয়মের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-মজু চৌধুরীরহাট সড়কটির জন্য প্রায় ১০০ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যদি সড়কটি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে সরাসরি সুফল ভোগ করবে লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ।
Development by: webnewsdesign.com