মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই বেঁচে থাকার প্রবণতা রয়েছে। দুঃসহ জটিল অবস্থার মধ্যেও সবাই বেঁচে থাকতে চায়। ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের জটিল মিথস্ক্রিয়াই আত্নহত্যার জন্য দায়ী। মানুষ যখন অন্যদের সঙ্গে একাত্মবোধ না করে বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে, সেই বিচ্ছিন্নতা আত্মহত্যার অন্যতম ঝুঁকি। আত্মহত্যাকারীদের এক বিরাট অংশ আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। সমস্যা মোকাবিলায় অদক্ষতা, হীনম্মন্যতা ইত্যাদি ছাড়াও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি, অথবা যারা আবেগের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় বা সহজে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকে। সম্পর্কজনিত জটিলতা, যেকোনো ব্যর্থতা (প্রেমে প্রত্যাখ্যাত, বিচ্ছেদ, পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, আকস্মিকভাবে সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন), কষ্টকর শারীরিক রোগ ইত্যাদি কারণে অনেকে আত্মহত্যা করলেও এ ধরনের আত্মধ্বংসী প্রতিক্রিয়া কখনোই স্বাভাবিক নয়। বিশ্ব আত্নহত্যা প্রতিরোধ দিবসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের (মেয়ে) মতামত তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক।
বিশ্ব আত্নহত্যা প্রতিরোধ দিবস ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পালিত হয়ে আসছে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে। আমাদেরকে নানা ধরনের খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। অনেকে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।কারন যাই হোক, আত্নহত্যা কোন সমাধান হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে আত্নহত্যা মহাপাপ! এ বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ মহান রাব্বুল আল-আমিন বলেন,
“আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।”-সূরা নিসা আয়াত(২৯-৩৯)
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন,”যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্নহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্নহত্যা করবে,জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্নহত্যা করেছে, তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে, যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।”[বুখারি,আসসাহিহ ৫৪৪২]
হীনমন্যতা, বিষন্নতা, বহতাশা, নিজের প্রতি বিতৃষ্ণাসহ নানা কারনে আমরা আত্মহননের পথ বেছে নেই। আমাদের মনে রাখা উচিত দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী আর পরকালের জীবন অনন্তকালব্যপী। দুনিয়ায় পাওয়া সামান্য কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য আমরা আত্নহত্যা করি কিন্তু আত্নহত্যার জন্য পরকালের নির্ধারিত যে শাস্তি তা বহুগুণে বেদনাদায়ক। তখন আমরা চাইলেও এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না। তাছাড়া অন্যান্য ধর্মও আত্নহত্যাকে সমর্থন করে না। তাই আমাদের সকলের উচিত এ ধরনের জঘন্য কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা;আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা ও ধৈর্যধারন করা।
★একজন মানুষের আত্নহত্যার পিছনে সমাজের বসবাসরত মানুষ ও পরিপার্শ্বিকতা অনেকাংশে দায়ী। তাই মানুষের সাথে মানবিক আচরণ করা জরুরি। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যার কারনে অন্যজন নিজের জীবনটাকে নিমিষে শেষ করে দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না। আত্নমর্যাদা রক্ষার জন্যই মানুষ আত্নহত্যা করে তাই মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে।দুনিয়াটাকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করতে হবে। সমাজের একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আজ আত্নহত্যা প্রতিরোধ দিবসে আসুন সকলে আত্নহত্যাকে না বলি আর নিজের জীবনকে ভালোবাসতে শিখি।
মারিয়া জান্নাত মিষ্টি
শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
আমাদের নিজেদের জীবন শেষ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবছর এক মিলিয়ন মানুষ এই পথ বেছে নেয়।যাদের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় তাদের মনে হয় আর কোনো পথ নেই। সেই সময় মৃত্যুই তাদের জগতের বর্ণনা হয়ে ওঠে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে কিশোর কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্নহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্নহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষের আত্নহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ। মানসিক চাপ আত্নহত্যার প্রধান কারণ। পারিবারিক সমস্যা, বেকারত্ব থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। একটি জীবন কোটি টাকা দিয়ে ও কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ যখন মানসিক দুশ্চিন্তার কবলে পড়ে যায় তখন তার কাছে জীবনের কোনো মূল্যে থাকে না। তখন মনে হয় মৃত্যুই তাকে শান্তি দিতে পারে । সে তখন শুধু নিজের জীবনের বিনাশ করে না সাথে নিজের পরিবারের , সমাজের এমনকি গোটা বিশ্বের ক্ষতি সাধন করে যায়। হয়তো সে তার কাজের মাধ্যমে সকলের উন্নতি ঘটাতে পারতো। কিন্তু সে তার মানসিক দুশ্চিন্তাকে বড় মনে করে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। তখন সে তার পরিবার ও সমাজের কারো কথা ভাবে না।সে মানসিক মুক্তি চায়, হারিয়ে যায় পৃথিবীর বুক থেকে। তাই কখনো মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগলে পরিবার অথবা বন্ধুদের সাথে তা শেয়ার করা। এতে মনের বোঝা অনেক কমে যায়।যদি পরিবার, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে না পারে তবে ডাক্তার বা মনোবিজ্ঞানীর নিকট হতে কাউন্সিল নেওয়া উচিৎ। কেননা তারা বুঝাতে পারবে এই পৃথিবীটা কত সুন্দর! তাই আত্নহত্যাকে না বলা উচিৎ। জীবনের মূল্য অনেক বেশি অবহেলার কারণে তা শেষ করা ঠিক নয়।
হিরা সুলতানা
শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
আত্মহত্যা বলতে স্বেচ্ছায় মানুষের নিজের জীবনদানকে বুঝায়। কিন্তু কেন মানুষ নিজের প্রিয় জীবনটাকে স্বেচ্ছায় বিসর্জন দেয়?
মূলত মানুষ মনে করে শুধুমাত্র অভাব -অনটন কিংবা আর্থিক সমস্যার কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করে। কিন্তু এ কারণটি বারবারই মিথ্যে হয়েছে। একাডেমিক কিংবা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল মানুষটিও আত্মহত্যা করে থাকে। ইদানীং আমরা কতগুলো আত্মহত্যা দেখেছি যেগুলা বেশ সমালোচিত ও আলোচিত।*বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের গলায় ফাঁশ দিয়ে আত্মহত্যা ভারত সহ বাংলাদেশে ও বেশ আলোচিত।
কেন একজন সফল অভিনেতা আত্মহত্যা করলো সে প্রশ্নও বারবার উত্থাপিত হয়েছে।
*ঢাবি ছাত্র এক মেয়েকে ভালোবাসে আত্মহত্যা করে ফেলেছে। মৃত্যুর আগে সে
ফেসবুকে বারবার জানান দিয়েছে।
“সিলিংয়ে ঝুলে গেল সত্ত্বা,
নাম দিয়েছে আত্মহত্যা।”
এমন নানারকম স্টাটাসে ভর্তি ছিল তার টাইমলাইন।
এরকম অসংখ্য আত্মহত্যার খবর আমরা রোজ পাই।কখনো পত্রিকায়, কখনো পাশের বাড়ির কেউ।
আত্মহত্যাগুলো কেন ঘটে?
আত্মহত্যাগুলো মূলত ডিপ্রেশন অথবা কোন মানসিক অসুস্হার কারণে ঘটে থাকে। তবে মূলত যে কারণটি বেশী দেখা যায় সেটি হচ্ছে ডিপ্রেশন। এই ডিপ্রেশন জিনিসটা আসলে কী?কেন এ ডিপ্রেশন এ একটি মানুষ ভোগে।ডিপ্রেশন হচ্ছে সেই রোগ যেটি মূলত চাওয়া -পাওয়ার পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়।এই ডিপ্রেশন মূলত অনেকটাই সামাজিক, পারিবারিক ভাবে সৃষ্টি। অসুস্থ প্রতিযোগীতার দরুণ এই ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়।
অমুকের ছেলের এত রেজাল্ট, তোর নাই কেন?ওমুকের দুটা গাড়ি আমাদের নাই কেন?আমার কী নাই যে, সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল?
এরকম শত শত কারণে মানুষের হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়।পারিবারিক কিংবা অসুসস্থ সংস্কৃতির চর্চার ফলেও ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়। আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত চাওয়া পাওয়ার হিসেবের কারণে ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়।সমাজের আরোপিত চাপের প্রভাবে আমরা ঝুঁলে পড়ি সিলিংয়ে। সমাজ আরোপ করে, বিসিএস ক্যাডার হওয়া লাগবে নাহলে জীবন বৃথা,জিপিএ ফাইভ লাগবে।এসবের কিছুই যখন জীবন থেকে পাওয়া যায় না সমাজ বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেয়। মনের মধ্যে সৃষ্টি নানা জল্পনা -কল্পনা।কাছের বন্ধুটিও হয়তো বুঝতে পারেনা কিংবা বুঝতে চায় না কী সমস্যা। এত সময় কার আছে?আমাদের অনেক তাড়া।রোবটিক, সায়েন্সটিফিক জীবনে আমাদের শ্বাস নেওয়ার সময়টুকু অনেক কষ্টে পাওয়া যায়।সেখানে মানসিক স্বাস্হ্য অবহেলিত। অবশেষে অনেক -অভিমান, অভিযোগ নিয়ে অনেকেই আত্মহননের পথ বেঁছে নেয়। আত্মহত্যা কোন সমাধান না। এ বাক্যে আসলে কাজ হওয়ার না। আমাদের সচেতন হওয়া লাগবে। নিজের ও নিজের প্রিয়জনের জীবন নিয়ে। অসুস্হ প্রতিযোগীতা থেকে বের হতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
সুস্হ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য নিজেকে বুঝতে হবে-আসলে কতটুকুই বা বেঁচে থাকার প্রয়োজন। যে সাফল্যের জন্য চলে যাচ্ছি,
সেটুকু কি আদৌ প্রয়োজন আছে। তাহলেই হয়তো আত্মহত্যা কিছুটা হ্রাস পাবে।
সাদিয়া সাবাহ্,
শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ
নৃবিজ্ঞান বিভাগ।
আমাদের নিজেদের জীবন শেষ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবছর এক মিলিয়ন মানুষ এই পথ বেছে নেয়৷ এমনকি যে সব সমাজে আত্মহত্যা বেআইনী বা নিষিদ্ধ সেখানেও মানুষ আত্মহত্যা করে৷ যাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় তাদের মনে হয় আর কোনো পথ নেই ৷ সেই মুহুর্তে মৃত্যুই তাদের জগতের বর্ণনা হয়ে ওঠে এবং এদের আত্মহননের এই সুতীব্র ইচ্ছাশক্তিকে কখনওই অগ্রাহ্য করা উচিত না- এই অনুভূতি সত্যিকার, শক্তিশালী ও তাত্ক্ষনিক৷ জাদুবলে এটা সরিয়ে তোলা যায় না৷
বর্তমানে যুবসমাজে সবথেকে বেশি প্রভাব দিয়েছে এই আত্মহত্যা বিষয়টি। আত্মহত্যা করার পিছনে একজন ব্যাক্তির অনেক কারণ থাকতে পারে। সবথেকে মূখ্য কারণ হয় ডিপ্রেশন। একজন মানুষ জন্মের পর থেকে সকলের মাঝে বেড়ে উঠে। বড় হওয়ার সাথে সাথে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়। সময়ের সাথে সাথে যখন সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তখনই মানুষ অনুভব করে একাকিত্বের বিষয়টি। কারোও সাথে কথা না বলতে পেরে সেই ব্যাক্তিটি চলে যায় মারাত্মক ডিপ্রেশনে।আর তখনই তাদের মনে হয় জীবিত না থেকে মরে গেলে তারা শান্তি লাভ করবে। কিন্তু মানুষ এ কথা ভুলে যায় যে নিজেকে নিজে ভালোবাসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
একথাসত্যি যে, প্রায়ই সাময়িক সমস্যার স্থায়ী সমাধান আত্মহত্যা হয়। আমরা যখন বিষন্ন বোধ করি তখন বর্তমান মুহুর্তের খুব সর্ঙ্কীর্ন প্রেক্ষাপটে আমরা জীবনটাকে দেখি৷ এক সপ্তাহ বা এক মাস পর হয়ত সবকিছু সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাবে। যারা একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ আজ বেঁচে আছে বলে খুশী৷ তারা বলে তারা জীবন শেষ করে দিতে চায়নি, শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিল৷ সবচেয়ে জরুরী কাজ, কারুর সঙ্গে কথা বলা৷ যাদের আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা হয় তাদের একা সব সামলানোর চেষ্টা করা উচিত না৷ তাদের এখনই সাহায্য চাওয়া উচিত৷
বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন। শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য বা বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে অনেকটা আশ্বস্ত হওয়া যায়। কয়েকজন পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারে না৷ কয়েকজনের অচেনা লোকের সঙ্গ কথা বলা সহজ মনে হয়৷ সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন৷ যদি কেউ দীর্ঘসময় যাবত বিষণ্নবোধ করে বা আত্মহত্যার ইচ্ছা থাকে সে হয়ত নিদানিক বিষণ্নতাবোধে ভুগছে ৷ এটা এক চিকিৎসাগত পরিস্থিতি, রাসায়নিক ভারসাম্য হারানোর ফলে এমন হয় এবং ওষুধের প্রেসক্রিপশন এবং থেরাপির সুপারিশ করে ডাক্তার এর চিকিৎসা করতে পারেন৷
জীবনের পথে ‘অগ্রসর হওয়ায়’, সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে তবে ঐ সময়ে কি ঘটছে তাও গুরুত্বপূর্ণ৷ কারুর আত্মহননের ইচ্ছা হলে তক্ষুনি ঐ অনুভূতির ব্যাপারে কথা বলা উচিত৷ আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এ কথা বলার জন্য বলা নয়, কাজেও প্রকাশ করতে হবে। সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
সাদিয়া নওশিন বিন্তি
শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ
পরিসংখ্যান বিভাগ।
আত্মহত্যা একটি গুরুতর সমস্যা এবং যে কোনও আত্মহত্যার হুমকি বা প্রচেষ্টা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিউএইচও) এর মতে বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ৮ লক্ষ’র মতো মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে থাকে; প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। আর সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা যে কোনো বয়সসীমার মধ্যেই বিদ্যমান হলেও, দেখা গেছে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর পেছনে দ্বিতীয়তম কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। মানসিক ব্যাধিগুলি আত্মহত্যার বর্ধিত ঝুঁকিতে একটি অপ্রতিরোধ্য ভূমিকা পালন করে – অনুমান সহ ৯০% পর্যন্ত ব্যক্তিরা নিজের জীবন গ্রহণ করে এমন এক ধরণের মানসিক রোগের সমস্যায় ভুগছেন। তাদের সাথে আত্মহত্যার ঝুঁকির সর্বাধিক বিস্তৃত মানসিক ব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধান হতাশাব্যঞ্জক ব্যাধি, ব্যক্তিত্বজনিত ব্যাধি, যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, পরকীয়া, প্রেম, দাম্পত্যকলহ এবং খাওয়ার ব্যাধি।
আত্মহত্যা সম্পন্ন হয়ে গেলে যেহেতু কিছুই আর করার থাকে না, এ জন্য প্রতিরোধই একমাত্র কার্যকর পন্থা। এ ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো:
১. রায় না দিয়ে তারা কী বলছে শুনুন। তাদের অভিজ্ঞতা বা আবেগ বঞ্চিত করবেন না।
২. আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৩. আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখা, তাদের কথা মনোযোগের সঙ্গে শোনা ও তাদের পাশে দাঁড়ানো সবার নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
৪. মাদকাসক্ত ব্যক্তি, মানসিক রোগী, অভিবাসী, বেকার ও সাংস্কৃতিকভাবে শ্রেণিচ্যুতদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। এ কারণে তাদের প্রতি বিশেষ সহায়তা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।
৫. আমাদের দেশে যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন এবং উত্ত্যক্তকরণের ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব কারণ দূর করার জন্য প্রয়োজন নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর প্রতি নারী-পুরুষ সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাও আত্মহত্যা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সর্বোপরি আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আত্মহত্যা বা আত্মহনন অমূল্য জীবনের অপচয়।
তানজিলা তাবাসসুম অন্তি
শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ
ফিন্যান্স বিভাগ।
আত্নহত্যার শাব্দিক অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে হত্যা করা। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে পৃথিবীতে আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম, ২০১১ সালে যা ছিল ৩৪তম। বিশ্বস্বাস্থ্যের মতে, প্রতিবছর প্রায় ৮লাখ ব্যক্তি এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা আত্মহত্যাকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যা কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। প্রখ্যাত ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তাঁর ‘The Suicide’ গ্রন্থে আত্নহত্যার ৪টি কারণ তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো- আত্মকেন্দ্রিকতা, নৈরাজ্য, পরার্থ ও হতাশা। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালেও প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আমরা খুঁজে পাচ্ছি প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা, বিশ্বাসঘাতকতা, ব্ল্যাকমেল, বেকারত্ব, পরীক্ষায় ফেল বা আশাহত ফলাফল, বঞ্চনা, ত্রীব মানসিক চাপ, পারিবারিক জটিলতাসহ বিবিধ দিক। যার প্রতিটিই ঘটে থাকে সমাজে, সমাজের মানুষের দ্বারা। চিকিৎসকগণ আত্মহত্যাকে মানসিকচাপের চড়ম রূপ বলে গণ্য করেছেন৷ এই আত্মহত্যাকে নিমূর্ল করতে সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। আর মানবিকতার বিকাশ ছাড়া হয়তো এর নির্মূলতাও কোনোদিনই সম্ভব না। সেইসাথে প্রয়োজন সর্বোচ্চ পারিবারিক সহযোগিতা, সুস্থ বিনোদন, আড্ডা, সংস্কৃতির চর্চা, খেলাধুলা। প্রায় প্রতিটা ধর্মই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে গণ্য করেছে। তাই স্ব-স্ব ধর্মীয় কার্যকলাপে উৎসাহী হওয়ার মাধ্যমেও এই প্রবণতা কমানো যায়। মানুষ হিসেবে বিভিন্ন দিকে আলাদা হলেও অনূভুতিতে আমরা প্রায় সবাই এক। আর অধিকাংশ সামাজিক মানুষই অন্যের আচরণ দ্বারা এতো বেশি প্রভাবিত হয় যে সুন্দর আচরণগুলোতে যেমন প্রাণবন্ত হয়; তেমনি অপ্রত্যাশিত ওই আচরণগুলোতে এই পৃথিবীটাকেই অসহ্যকর মনে করে, বেড়ে যায় আত্মহত্যা। যেকোনো সম্পর্কে, যে কোনো পরিস্থিতিতে তাই অন্যের সঙ্গে সেই আচরণটাই করা উচিত; যে আচরণটা আমরা অন্যের থেকে প্রত্যাশা করি, যা আমাদেরকে খুশি রাখে। এর ফলে আত্মহত্যা কমে যাবে অনেকাংশে। আজকের এই “বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসটি”-কে কেন্দ্র করে প্রতিটি দিনই মানসিক সুস্থতায় পৃথিবীতে বিচরণ করুক প্রত্যেকটি মানুষ। আত্মহত্যা তো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা নয়; এ একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা- এটা আমরা সবাই জানি। তবুও সমাজ থেকে নির্মূল হচ্ছে না এই সমস্যাটি। প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে; আর সামাজিক সচেতনতা ও মানবিকতার বিকাশ ছাড়া হয়তো এর নির্মূলতাও কোনোদিনই সম্ভব না।
রুকাইয়া মিজান (মিমি)
শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ,
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।
Development by: webnewsdesign.com