গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে পেঁয়াজের বাজারে। কোরবানির ঈদের আগে থেকে দফায় দফায় বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম।
বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকা সংশ্লিষ্টরা যেন কোনোভাবেই ঊর্ধ্বমুখী এ পণ্যটির দামের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না। পেঁয়াজের দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকার কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটের কথা বলছেন বিক্রেতারা। যদিও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সরবরাহের সংকট দেখা যায়নি। বরং ক্রেতারা এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অসাধু মনোভাবকে দায়ী করছেন।
সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও পশ্চিম রাজাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। প্রতিটি দোকানেই সাধারণ সময়ের মতোই যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। দাম বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি কিছুটা কমলেও চাহিদায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে প্রতিপাল্লা (পাঁচ কেজি) পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজ ৫২০ টাকা থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৫১০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা পাল্লা।
এক সপ্তাহ আগে এ বাজারেই প্রতিপাল্লা পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজ ৪৬০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৪২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৪০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম পাল্লায় ৫০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেজি হিসেবে বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
কোরবানির ঈদের আগে এ বাজারে প্রতিপাল্লা পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪০০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৮০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকায়।
পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও অনেক বেশি। পশ্চিম রাজাবাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ টাকা এবং ঈদের আগে ছিল ৯০ টাকা।
দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন বাজারে যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে সেটি হালি পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজ আরও ৪-৫ মাস আগে কৃষক ঘরে তুলেছেন। এ পেঁয়াজ এখন শেষের দিকে। তাই কৃষক হাটে পেঁয়াজ কম বিক্রি করছেন। এ কৃষকদের কাছ থেকেই আড়তদাররা পেঁয়াজ কিনে আনেন। তাদের কাছ থেকে আমরা পাইকারি বিক্রেতারা কিনি। আমাদের কাছ থেকে কেনে খুচরা বিক্রেতারা।
এছাড়া গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে কৃষক তার পেঁয়াজ হাটে কম বিক্রি করছেন। যার কারণে বাজারে সরবরাহের সংকট তৈরি হয়েছে। দামও বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত দুদিন বৃষ্টি না থাকায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা স্থির হয়েছে। কিছুটা হয়তো কমবেও। তবে পেঁয়াজের দাম অনেক কমার সম্ভাবনা নেই। যদি বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় তাহলে পেঁয়াজের দাম আবার আগের অবস্থায় আসতে পারে। নাহলে আবার পেঁয়াজের মৌসুম না আসা পর্যন্ত এভাবেই থাকবে।
মিঠু নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ভারতেই পেঁয়াজের দাম বেশি। যার কারণে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেশি। নতুন দেশি পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এমনই ৯০-১০০ টাকা থাকবে। পশ্চিম রাজাবাজারের মুদি দোকানদার মো. রুবেল বলেন, ঈদের আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আড়তদাররা বলছেনু, সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। আসল কারণ জানি না। আমরা আড়ত থেকে দুই এক বস্তা পেঁয়াজ কিনে আনি। যদি আড়তে পেঁয়াজের দাম কমে তাহলে আমরাও কম দাম বিক্রি করতে পারবো।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, বড় বড় ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। চাহিদার তুলনায় তাদের কম পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফেরদৌস রহমান। একটি পাইকারি দোকান থেকে ৫২০ টাক দরে এক পাল্লা পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ৩৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আজ কিনতে হলো ৫২০ টাকা দিয়ে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এত বেশি বাড়ার কথা না। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে এ বাজার সিন্ডিকেটকে থামানো। নাহলে মানুষ এক সময় তার মৌলিক অধিকার পূরণে ব্যর্থ হবে। এখনই বাজার করতে গিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।
সামশ তাবরিজ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, প্রতিদিন রান্নায় পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। চাইলেও এটিকে বাদ দেওয়া যায় না। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে পেঁয়াজ না খাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখনই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক কিনতে হচ্ছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, আলু, কাঁচা মরিচসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দামই এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে বেশ কয়েক সপ্তাহ বাড়তি দামের পর কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতিহালি লাল ডিম ৪৮ টাকা ও সাদা ডিম ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও যথাক্রমে ৫০ ও ৪৬ টাকা ছিল। ঈদের আগে ছিল যথাক্রমে ৬০ টাকা ও ৫৫ টাকা।
Development by: webnewsdesign.com