বিস্ময়কর হলেও অ্যাক্সোলটল বা ওয়াকিং ফিশ অঙ্গ হারালে তা আবার গজায়। একে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘রিজেনারেশন’। কিন্তু কিভাবে এমনটি করে তারা? এ নিয়ে গবেষণা করছেন ভিয়েনার এক দল বিজ্ঞানী। গবেষণার কাজে এক হাজার ৮০০টি ওয়াকিং ফিশ আছে ভিয়েনা মলিকিউলার প্যাথলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। এখানে রিজেনারেশন বায়োলজি নিয়ে গবেষণা হয়।
অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ওয়াকিং ফিশের কোনো অঙ্গ যেমন পা আলাদা করে ফেলা হলে, পায়ের অবশিষ্টাংশ থেকে সেই পা আবার জন্মায়। ফাইব্রোব্লাস্ট নামের বিশেষ ধরনের একটি কোষ এই পুনর্বৃদ্ধির কারণ। অ্যাক্সোলোটলটির ভেতরে কী ঘটছে তা ল্যাবের ভেতর দেখার চেষ্টা করছেন গবেষক ক্যাথরিনা লাস্ট। তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সব ফাইব্রোব্লাস্ট ও সংযোগকারী কোষগুলোকে লাল দেখতে পাচ্ছি। ইনজুরি হলে ফাইব্রোব্লাস্ট কোষগুলো প্রজেনিটর কোষে পরিণত হতে পারে, যা বাকি সব কোষকে ধংস করে দেয় এবং হাড়ের কোষ তৈরি করে।’
প্রজেনিটর কোষগুলো স্টেম কোষের মতো অলরাউন্ডার। তারা শুধু নতুন কোষগুলোকেই ধ্বংস করে। এর ফলে আক্রান্ত অঙ্গগুলোর পুনর্বৃদ্ধি ঘটে। যদি মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অ্যাক্সোলোটল তার লেজ বা পেছনের পা নাড়াতে পারে না। অতিবেগুনি আলোতে ইনজুরিটি একটি ফাঁকা জায়গার মতো দেখা যায়। লাস্ট বলেন, তাই মেরুদণ্ডের আঘাতটি প্রাণীটিকে অচেতন করেই করা হয়। তিনটি উপায়ে করা হয়ে থাকে। এক. লেজের একটু অংশ আলাদা করে ফেলা হয়। দুই. মেরুদণ্ডের মাঝে একটি অংশ কেটে ফেলা যেতে পারে কিংবা তিন. তুলনামূলক নতুন পদ্ধতিটি হলো, মানুষের শরীরে যেমন আঘাত লাগে তেমন আঘাত করা।
মেরুদণ্ডের আঘাতের কারণে আজীবন শরীরের নিম্নাংশ অকেজো হয়ে যেতে পারে। কারণ টিস্যু আঘাত পেলে ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষত তন্তুগুলোকে নতুন পেশি তৈরিতে বাধা দেয়। এর ফলে মস্তিষ্ক পেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে অ্যাক্সোলোটলের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের ক্ষত সেরে যাবে এবং নতুন টিস্যু তৈরি হয়।
জীববিজ্ঞানী লাস্ট বলেন, ‘আমরা দেখেছি, মানুষের মেরুদণ্ডে যেসব টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অ্যাক্সোলোটলে তা হয় না। বরং নতুন নিউরন তৈরি করে। আর যেহেতু সে অর্থে কোনো ক্ষতই তৈরি হলো না, স্নায়ুকর্ডগুলো ইনজুরি আক্রান্ত জায়গা ছাপিয়ে বেড়ে ওঠে এবং মেরুদণ্ডকে ফের সচল করে। ফলে প্রাণীগুলো আবারো চলাচল করতে পারে।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে।
Development by: webnewsdesign.com