বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিনের চক্রান্তে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব- পর্ব ১

রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১ | ৮:৩৯ অপরাহ্ণ

বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিনের চক্রান্তে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব- পর্ব ১
apps

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভোলাগঞ্জ ১০ নং এলসি ঘাট হয়ে ভারত হতে বাংলাদেশ এলসিতে আমদানী হয়ে থাকে পাথর। বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিন এই এলসি পাথর ব্যবসা থেকে চাঁদাবাজী করার জন্য নতুন একটি চাঁদাবাজীর কৌশল করে আসছেন।

জানা গেছে, বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিনের এমন চাঁদাবাজীর কৌশলটি হলো- ভোলাগঞ্জে পাথর এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরী করেছেন তিনি। আর এই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছে ভোলাগঞ্জ পাথর এসোসিয়েশন। তবে এই সংগঠনটির সরকারীভাবে কোন অনুমোদন নেই। আর এই সংগঠনটির সভাপতি হলেন শাহাবুদ্দিন।

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আর চট্টগ্রাম হতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক পাথর ব্যবসায়ীরা এই বর্ডার দিয়ে মাল বাংলাদেশে আমদানী করলে শাহাবুদ্দিনের কথিত এই সংগঠনটি ও তার বাহিনী মিলে মালগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যান। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে এই মালগুলো ফিরিয়ে দিবেন বলে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করার আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে যান শাহাবুদ্দিন।

পরে শাহাবুদ্দিন এসব টাকা প্রতারণার মধ্যে আত্মসাৎ করে ফেলেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার সময় চট্টগ্রামের পাথর ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদকে বলেন আপনি ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরে আপনাকে তাদের ভোলাগঞ্জ পাথর এসোসিয়েশনে অন্তভূক্ত হতে হবে তাহলে তাদের কোন লোক কোন ব্যবসায় বাঁধা সৃষ্টি করবে না বলে আশ্বাস দেন শাহাবুদ্দিন। শুধু তাই নয় তার কাছ থেকে ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর ১০ লক্ষ টাকা নেয় তিনি। কিন্তু এই টাকা নেওয়ার পরে শাহাবুদ্দিনকে কথিত সংগঠনের সদস্য করতে বললে সে তাকে সদস্যও করেনি এবং তার ১০ লক্ষ টাকাও ফেরত দেয়নি চাঁদাবাজ শাহাবুদ্দিন। এই টাকা আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতেও পারেননি ফারক।

পাথর ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার কয়েকশ’ পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এভাবে টাকা ও সদস্য হওয়ার জন্য কাগজপত্র নেন শাহাবুদ্দিন। পরে সংগঠনের সদস্য করার আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন এভাবে মানুষদের ভোগান্তি করে আসছেন।

সূত্র আরো জানায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ কর্তৃক লিজকৃত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন পার্কিং কেন্দ্রের সীমানার ভেতরে অবাদে পাথর ফেলে পুরাদমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন পাথর খেকো বলে খ্যাত চাঁদাবাজ বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিন।

অন্যের লিজকৃত জায়গা জোরপূর্বক দখল করে পর্যটকদের চলাফেরায় পরিকল্পিত ভাবে বাধা সৃস্টি করছে শাহাবুদ্দিন। অবাদে পার্কিং সীমানার ভেতরে পাথর ফেলার কারনে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র পার্কিং এর ইজারাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নাঈম মোহাম্মদ শহীদ তালুকদার জানান, ৮/০৮/২০১৯ ইং তারিখে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ কর্তৃক লিজকৃত ভূমির দক্ষিণ পাশের সীমানা ভেংগে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধভাবে পাথর ফেলে দখল করে আছেন ভুমি খেকো বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিন। লীজকৃত জায়গা অবৈধ ভাবে দখলের কারনে পর্যটকদের গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা দিতে না পারায় প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছে পর্যটকবাহী অনেক গাড়ি। এভাবে চলতে থাকলে বিশাল লোকসানের মুখে পড়বে আমার ইজারাদারী প্রতিষ্টান।

তিনি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর ইজারাকৃত জায়গার সীমানা ভেংগে বিএনপি নেতার পাথর ফেলে দখলের ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল করে অভিযোগ জানালে, তিনি ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা বলেন। পরবর্তীকে এর কোন ব্যবস্থা কিন্তু এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।

তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দ্রুত সম্ভব লিজকৃত ভুমি ইজারাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সমজাইয়া দেয়ার জোর দাবী জানান।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই ইজারাকৃত জায়গা অবৈধ ভাবে দখলে ছিলেন সাবেক সিলেট জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও সাবেক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দীন। এই জায়গা হাত ছাড়া হওয়ার পর থেকে অবৈধ ভাবে পাথর ফেলে দখল করে ইজারাদারকে লীজকৃত জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিন।

এ ছাড়াও ভোলাগঞ্জ এল সি ঘাঠে অনুমানিক প্রায় ৫০/৫৫ একর সরকারী জায়গা দখল করে আছেন শাহাবুদ্দিন। অবৈদ ভাবে দখল করা এই জায়গা ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছেন এক থেকে দেড় কোটি টাকা।

এলাকাবাসীর দাবি, এই দুর্নীতিবাজ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করলে তার সকল অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ভোলাগঞ্জ পর্যটন ক্লাবের সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় ভোলাগঞ্জকে পর্যটক শূন্য করতে একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিত ভাবে উঠে পড়ে লেগেছে। তিনি ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন পার্কিংয়ের জায়গা দ্রুত সম্ভব দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জানান, পর্যটন পার্কিং কেন্দ্রের সীমানার ভেতরে যদি কেউ অবৈধ ভাবে পাথর ফেলে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রবিবার ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে এ ব্যাপারে ভোলাগঞ্জ পাথর এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এখানে কারো কোন ল্যান্ড নেই। আমরা সরকারের জায়গাই পাথর ফেলে আসতেছি। আমরা ইমপোর্টার। আমাদের সরকারেই জায়গা দিয়েছে এখানে পাথর ফেলার জন্য।

সংগঠনের সদস্য করার জন্য পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পাথর ব্যবসায়ীরা কি বোকা? যে সংগঠনের সদস্যের জন্য টাকা দিবেন। পাথর ব্যবসারাইতো নাই। পাথর কোয়ারীইতো বন্ধ।

শীঘ্রই আসছে দ্বিতীয় পর্ব……….

Development by: webnewsdesign.com