উত্তর ক্যারোলিনার বল্ডহেড আইল্যান্ডের দক্ষিণে মূল ভূখণ্ড ছাড়িয়ে ৩২ মাইল দূরে রোমাঞ্চবিলাসী পর্যটকদের প্রিয় আস্তানা। সমুদ্রের মাঝে এমন এক জায়গা যেখানে একা থাকতে বুক দুরুদুরু করে, আবার প্রকৃতিকে ভীষণ কাছ থেকে উপভোগ করা যায়। না কোনো কোলাহল, না কোনো যান্ত্রিক শব্দ। প্রকৃতির ডাকেই ঘুম ভাঙে এই হোটেলে। তবে অনেকের মতে, এটাই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হোটেল! কিন্তু কেন? আর কোথায় রয়েছে এই হোটেল?
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, উত্তর ক্যারোলিনার বল্ডহেড আইল্যান্ডের দক্ষিণে ৩২ মাইল সমুদ্রের গভীরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই হোটেলটি। এই হোটেলে আস্তানা গড়তে হলে মূল ভূখণ্ড ছাড়িয়ে ৩২ মাইল দূরে যেতে হবে, বা উড়ে যেতে হবে কোনো হেলিকপ্টারে। কারণ স্থলপথের সঙ্গে এই হোটেলের কোনো যোগ নেই।
হোটেলটির নাম ফ্রাইং প্যান হোটেল। ফ্রাইং প্যান-কারণ এই সমুদ্রের এই অংশে গভীরতা কম। ফ্রাইং প্যানের যেমন চ্যাপ্টা হয়, তার গভীরতা কম হয়, এই অংশটাও অনেকটা সেই রকম। তাই এর নাম ফ্রাইং প্যান হোটেল।
সমুদ্রের মাঝে কিভাবে গড়ে তোলা হল এই হোটেল? আসলে এটা আগে একটা লাইট হাউস ছিল। আমেরিকা কোস্ট গার্ডরা এই লাইট হাউস ব্যবহার করতেন। ১৮৫৪ সালে জাহাজকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই লাইট হাউস গড়ে তোলা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে নতুন করে এই লাইট হাউসের মেরামত করা হয়। লোহার কাঠামো সরিয়ে দিয়ে স্টিলের কাঠামো দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৭০ সাল নাগাদ জিপিএস প্রযুক্তি চলে আসে। যার সাহায্যে জাহাজের নাবিক খুব সহজেই সমুদ্রের গভীরতার আন্দাজ পেতে শুরু করেন। সে সময় থেকেই লাইট হাউসটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
২০১০ সালে উত্তর ক্যারোলিনার বাসিন্দা রিচার্ড মিল এই লাইট হাউসটা কিনে নেন। সমুদ্র থেকে ৮৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত লাইট হাউসের মেরামত করিয়ে তিনি তাকে একটা হোটেলের রূপ দেন। অটলান্টিকের বিশালাকার ঢেউ আর সামুদ্রিক ঝোড়ো হাওয়া যাতে পর্যটকদের কোনো ক্ষতি না করতে পারে, তার জন্য হোটেলের কাঠামোকে বেশ শক্তপোক্ত বানিয়েছিলেন তিনি। তবে এই লাইট হাউস হোটেলকে পাঁচতারা হোটেলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন! পাঁচতারা হোটেলের মতো ব্যবস্থা এখানে আপনি পাবেন না। তবে আকাশে কাচের টুকরোর মতো তারার ছড়িয়ে থাকা, নির্জন পরিবেশে সমুদ্রের ডাক যে কোনো রোমাঞ্চ প্রিয় পর্যটককে মুগ্ধ করবে। এই হোটেলে পর্যটক নিজস্ব বোটে আসতে পারেন, বা হোটেল কর্তৃপক্ষ নিকটবর্তী আইল্যান্ড থেকে তাকে নিজস্ব স্পিড বোটে নিয়ে আসতে পারেন। কিংবা কেউ চাইলে হোটেল কর্তৃপক্ষের হেলিকপ্টারেও উড়ে আসতে পারেন। তবে তাতে খরচ আরো খানিকটা বেশি পড়বে।
হোটেলের মোট আটটি রুম রয়েছে। রুমগুলো অবশ্যই ছোট। প্রতি রুম থেকে সমুদ্র দেখা যায়। যাতে পাঁচটি টুইন বেড এবং তিনটিতে কুইন বেড রয়েছে। একজন পর্যটকের দু’রাত, তিন দিনের জন্য থাকা-খাওয়া খরচ পড়বে ৫৯৮ ডলার। এর মধ্যে হোটেল থেকে বোটে যাতায়াত খরচ অন্তর্ভুক্ত। আর হোটেলে হেলিকপ্টারে চেপে যেতে চাইলে একজন পর্যটকের দু’রাত, তিন দিনের জন্য থাকা-খাওয়া খরচ পড়বে এক হাজার ২৯৫ ডলার।
Development by: webnewsdesign.com