সেই তামান্নার লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত

বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২০ | ৬:১৭ অপরাহ্ণ

সেই তামান্নার লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত
apps

পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিল অদম্য মেধাবী তামান্না নূরা। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই মেয়েটির পাশে থাকার; লেখাপড়ায় সহযোগিতার। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে সরে গেছেন প্রতিশ্রুতি দেয়া অনেকেই। তামান্না নূরার উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তার পরিবারকে। কঠিন বাস্তবতায় মেধাবী এই মেয়েটির লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ ক্রমেই আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে।

তামান্নার বাবা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলী আশাবাদী মানুষ। তার পরও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে একটু যেন হতাশার সুরও বাজলো তার অভিমানী কণ্ঠে। বললেন, আপনারা মেয়েটিকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর রাখেন। কিন্তু অনেকেই খোঁজ রাখেনি। যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারাও পরে ফিরে তাকাননি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তামান্না নূরার সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা প্রচার হওয়ায় অনেকেরই তার কথা মনে থাকবে।

 

 

 

 

 

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জেকে হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল মেয়েটি। অদম্য মেধাবী এই মেয়েটির দুই হাত ও একটি পা নেই। শুধু একটি পা নিয়ে জন্ম নেয়া মেয়েটির পা তার সংগ্রামের হাতিয়ার। এক পা দিয়ে লিখেই ছিনিয়ে এনেছে এসএসসিতে সর্বোচ্চ সাফল্য। এ সাফল্যের খবরে অনেক মানুষ ও প্রতিষ্ঠান শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা নিয়ে তার কাছে ছুটে গিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল লেখাপড়া অব্যাহত রাখার জন্য সহযোগিতার। কেউ কেউ শিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারা আর যোগাযোগ করেননি।

 

 

 

 

 

এসএসসি পাসের পর তামান্না এখন বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এখানেও সে মেধার সাক্ষর রেখে চলছে। কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান জানিয়েছেন, তামান্না অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কলেজে তার লেখাপড়ার দিকে বাড়তি নজর দেয়া হচ্ছে।

তামান্নার বাবা রওশন আলী একটি ননএমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসার শিক্ষক। টিউশনি করে সংসার চালাতে হয়। তার পক্ষে তামান্নার লেখাপড়ার খরচ বহন করাও সম্ভব হয়ে উঠছে না। তিনি জানান, বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে তাকে প্রাইভেট পড়তে হয়। কিন্তু এই শিক্ষকদের ন্যূনতম বেতন দেয়ার অবস্থাও তার নেই। সব মিলিয়ে মাসে অন্তত দশ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি এ খরচের জন্য একটি মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো মেয়েটি তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারতো।

 

 

 

 

রওশন আলী বলেন, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে তামান্নার উচ্চশিক্ষার বিষয়ে যাবতীয় খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে তারা আর খোঁজ নেয়নি। সে সময় ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন থেকেও তামান্নার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটি ও একজন কানাডা প্রবাসী আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য তা অপ্রতুল।

 

 

 

 

এ প্রসঙ্গে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাধন কুমার বিশ্বাস জানান, বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা উপজেলার পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় ঘরসহ কিছু সহযোগিতা করেছি। সর্বশেষ ঝিকরগাছার একটি উন্নয়ন সংস্থা ‘জেডিও’ থেকে দেড় হাজার টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তা অপ্রতুল। মেয়েটিকে কীভাবে একটু সহযোগিতা করা যায় তা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com