সিলেটে বন্যার্তদের দিন কাটছে ত্রিপলের ছাউনির নিচে

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ | ৬:০৩ অপরাহ্ণ

সিলেটে বন্যার্তদের দিন কাটছে ত্রিপলের ছাউনির নিচে
apps

বন্যার শুরু থেকে অনেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করছেন। আজ সোমবার সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার জনিগাঁও এলাকায়সড়কের পাশ ঘেঁষে সারি সারি অস্থায়ী থাকার জায়গা। বাঁশের খুঁটি পুঁতে তাঁবুর মতো করে তৈরি করা হয়েছে সেসব। কোনোটির ছাউনি ত্রিপলের। কোনোটি আবার মোটা পলিথিনের। কারও ছাউনি আবার পুরোনো সিমেন্টের বস্তা কেটে সেলাই করে বানানো।

দোচালার মতো করে বানানো এসব অস্থায়ী ঘরে দিন কাটাচ্ছেন শত শত বন্যার্ত মানুষ।সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে সড়কের পাশে কয়েকটি জায়গায় এভাবে বন্যার্তদের থাকতে দেখা গেছে। কোথাও আবার গবাদিপশুর জন্য তৈরি করা হয়েছে এসব অস্থায়ী থাকার জায়গা।

সুনামগঞ্জের ছাতক থানাধীন বড়কাপন গ্রাম এলাকায় সড়কের পাশে অর্ধশতাধিক এমন ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে তৈরি থাকার জায়গা দেখা গেছে। এগুলোর বেশির ভাগের মধ্যেই থাকছেন বন্যার্ত মানুষের। কিছু অস্থায়ী ঘর বানানো হয়েছে গবাদিপশুর জন্য।

রাস্তার পাশে সিমেন্টের বস্তা কেটে সেলাই করে তৈরি ছাউনিতে গত ১০ দিন ধরে থাকছেন দক্ষিণ বরকাপন গ্রামের সারুখজান বেগম। ছাউনিটি মূলত তাঁর ভাইয়ের। স্বামীহারা সারুখজান ভাই আঞ্জব আলীর পরিবারের সঙ্গেই থাকেন।

সারুখজান সংবাদ মাধ্যকে বলেন, ‘আবো ঘরো হাঁটু বরাবর পানি। এরলায় ঘরো যারাম না। ইখানো খানি মিলের, কিন্তু টয়লেটো বাক্কা (প্রচুর) সমস্যা।’

সারুখজানের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁদের থাকার ঘরটি ছিল টিনের ছাউনি আর টিন দিয়ে তৈরি বেড়ার। তাতে ছিল বাঁশের খুঁটি। সেই ঘরটি বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। আর উঠানে এখনো প্রায় কোমরপানি।

বড়কাপন এলাকার বাসিন্দা ফখর মিয়া তাঁর স্ত্রী বেগম বাহার ও চার সন্তানকে নিয়ে ত্রিপলের ছাউনি নিচে ১০ দিন ধরে আছেন। কোনোমতে জানটা বাঁচিয়ে ঘর ছেড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরো চাউল আছিল ১০ কেজির লাহান। ধান আছিল ৫ বস্তা (প্রায় ৭ মণ)। বন্যার পানির আফালে (স্রোতের) চাউলের পাতিল ভাসায় লই গেছেগিয়া। পানিতে ভিজজা ধানে চারা অই গেছে।’

ফখর মিয়া বলেন, তাঁর ঘরের ভেতর এখনো প্রায় হাঁটুপানি আছে।সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জনিগাঁও এলাকাতেও প্রায় ৩০টি পরিবারকে এভাবে রাস্তার পাশে ত্রিপল টানিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের থাকার ত্রিপলের নিচেই গবাদিপশুও রাখছিলেন। তাঁদের অনেকে বলছেন ঘরের ভেতরে এখনো প্রায় হাঁটুপানি থাকায়, তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না।এ ছাড়া বন্যার পানির স্রোতে অনেকের ভিটের মাটি ক্ষয়ে পানিতে ভেসে গেছে। কারও ঘর ভেঙে গেছে। ভিটার মাটি নরম হওয়ায়, হেলে পড়েছে কারও কারও ঘর।

জনিগাঁও এলাকায় পলিথিনের ছাউনিতে পরিবার নিয়ে গত ১১ দিন ধরে থাকছেন পিঠাখসি এলাকার বাসিন্দা শ্রমজীবী এরশাদ আলী। তাঁর ঘর একপাশে হেলে গেছে। কোনোমতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তা ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে।তাঁর ত্রিপলের ছাউনির ভেতরে একটি কাঠের চৌকি বসানো ছিল। এর ওপরেই টিনের চুলা রাখা। তাতে ভাত রান্না করছিলেন স্ত্রী ইসমত আরা। জানালেন, ত্রাণের কিছু চাল ছিল। সেটাই রান্না করছেন। তবে তরকারি রান্নার কিছুই নেই।

Development by: webnewsdesign.com