রাজশাহীর পুঠিয়ায় আগাম খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ পরিচর্যা শুরু

বুধবার, ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ৮:০৯ অপরাহ্ণ

রাজশাহীর পুঠিয়ায় আগাম খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ পরিচর্যা শুরু
apps

পুঠিয়ার গ্রাম অঞ্চল গুলোতে খেজুরের সুমিষ্ট রস ও সুস্বাদু গুড়ের আশায় খেজুর গাছ পরিচর্যা শুরু করেছে এ এলাকার কৃষকেরা। ভালো দামের আশায় এ অঞ্চলে কৃষকেরা আগাম খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরী করতে অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরেও আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই গাছিরা ব্যাস্ত সময় পার করছেন। কাঁচি হাতে গাছিরা খেজুর গাছ ঝুড়ে এবং গাছের আগা পরিস্কার করে রস নামানোর উপক্রম করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সংসরে স্বচ্ছলতার আশায় দিন রাত তাদের এ নিরন্তন প্রচেষ্টা চলবে খেজুরের রস থাকা কালীন সময়। এ সময় রাজশাহী জেলার অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু খেজুরের গুড় উৎপাদনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন কারণ এই সুস্বাদু গুড় কৃষকদের শীতকালীন মৌসুমি ব্যবসা। এ ব্যবসা চলে পুরো শীত কাল জুড়ে। পুঠিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ২৯০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে ২১৭৫০টি।

এতে খেজুর গুড় উৎপাদন হয় ৩২৪১ মেট্রিকটন যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ বছরও খেজুরের গাছ আগাম পরিচর্যা শুরু করেছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা। এ জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছের উপরের দিকে কেটে ফেলতে হয়। কাটা অংশের নিচে বাঁশ বা গাছের খিল লাগানো হয় যার মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটা রস গাছে বাঁধা হাড়িতে পড়ে। সারা রাত হাঁড়ি রসে ভর্তি হয়। খুব সকালে হাঁড়ি নামানো হয়। এভাবেই রস আহরণের কাজ করে থাকেন গাছিরা। আহোরিত খেজুরের রস দিয়ে পাটালি বা খুরি ও লালি দুই ধরনের গুড় তৈরি করা হয়।

পাটারি বা খুরি বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়। আগাম খেজুরের গুড় তৈরি করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে তাদের এ প্রচেষ্টা। দড়ি, কাঁচি হাতে বানেশ্বর মাড়িয়া গ্রামের মৃত আমেদুল রহমানের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক (৫০) বলেন, আশ্চিন মাসের শেষ সপ্তাহে খেজুরের রস অল্প অল্প নামা শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে বাজারে গুড়ের আমদানি কম থাকে। তাই দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও একাধিক কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুুরের গুড় তৈরি করে অধিক লাভবান হওয়া যাবে।

উপজেলার মধ্যে যে সব এলাকায় খেজুরের গাছ পরিচর্যা শুরু হয়েছে সে সব এলাকার মধ্যে অন্যতম বানেশ্বর, নওদাপাড়া, ভুবননগর, শাহবাজপুর, ফতেপুর, মাইপাড়া, বিড়ালদহ, শিবপুর, নয়াপাড়া, গাঁওপাড়া, বাসপুকুরিয়া, নামাজগ্রাম, প্রমুখ। এসব এলাকার কৃষকেরা তাদের তৈরি গুড় পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট ঝলমালিয়া হাট ছাড়াও আশে পাশের হাট গুলোতে বিক্রি করা হয়। এসব গুড় এলাকার চাহিদা পুরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কাছে সুস্বাদু এ গুড় পৌঁছে যায়।

শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে পায়েস, বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা তৈরি করা হয়। পুঠিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুইয়া জানান, খেজুর গাছ চাষ করতে বাড়তি কোন জমির প্রয়োজন হয় না। জমির আইলে অথবা আমাদের বাড়ির অঙ্গিনায় এই গাছ গুলো হয়ে থাকে। উপজেলার সব এলাকা জুড়ে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। এটি একটি আমাদের এ অঞ্চলের বাড়তি ফসল। এই গুড় তৈরিতে শত শত মানুষ কাজ করে থাকে। এর ফলে পুঠিয়ার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Development by: webnewsdesign.com