প্রস্তাবিত হজ আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১ | ৭:১২ অপরাহ্ণ

প্রস্তাবিত হজ আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
apps

প্রস্তাবিত হজ আইনের কয়েকটি ধারা বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা। অন্যথায় মানববন্ধন, সমাবেশসহ আরো বড় কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন তারা।

রোববার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট’র ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক সভাপতি আব্দুস সোবহান ভুইয়া হাসান বলেন, হজযাত্রীর ৯০ শতাংশ পরিচালনা করে হজ এজেন্সিগুলো। অথচ এজেন্সি মালিকদের অন্ধকারে রেখে প্রস্তাবিত হজ ও ওমরাহ আইন ২০২০-এ সংবিধান বিরোধী একাধিক ধারা-উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এটি পাস হলে হজ ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে এবং প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।

সোবহান বলেন, নতুন ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা সংবিধান বিরোধী ধারা উপধারা যুক্ত করে এ হজ ও ওমরাহ আইন প্রস্তাব করেছেন। এটি এখন ভোটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।

আমরা এ আইনের বিতর্কিত ধারা ১৫ প্রশাসনিক ব্যবস্থা (১), ধারা-১৬ জরিমানার অর্থ আদায়, ধারা ১৭ এর আপিল আবেদন, ধারা-১৮ ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ, ধারা ২০ আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ ও ধারা ২৩ রহিত করণ ও হেফাজতসহ একাধিক ধারা-উপধারা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

এজন্য আমরা নতুন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সদস্যসহ সবার সাথে বৈঠক করেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে আলোচনার পাশাপাশি আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি।

এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হাব গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও হজযাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, সংগঠনটির নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: তাজুল ইসলাম, আটাবের সাবেক সেক্রেটারি আসলাম খান, আব্দুস সালাম আরেফি ও মো: মানিক প্রমুখ।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, প্রস্তাবিত হজ আইন বাতিল করা না হলে বেসরকারি পর্যায়ে হজ ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া এসব ধারা উপধারা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

স্টেকহোল্ডার হিসেবে হাবের ভূমিকা জানতে চাইলে আটাবের সাবেক সেক্রেটারি আসলাম খান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত হজ আইনটির বিতর্কিত ধারা সম্পর্কে হাব নেতারাও অন্ধকারে ছিল। আমরা তাদের বিষয়টি জানানোর পর এসব ধারা বাতিলের জন্য তারা সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাঁচ দফা দাবি
প্রথমত, একটি হজ বা ওমরাহ এজেন্সিকে ধর্মীয় সেবা প্রদানের জন্য কাজ করতে হয়। যাত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা টিকেট, ভিসা, মোয়াল্লেম ফি ও বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হয়। হজযাত্রীদের টিকেটের টাকা রিজার্ভফান্ডে জমা থাকে হজ এজেন্সির মালিকরা এ টাকা কেবলমাত্র সৌদি এয়ারলাইন্স ও বাংলাদেশ বিমানের নামে পে-অর্ডার করতে পারেন। মোয়াল্লেম ফি ও বাড়ি ভাড়ার টাকা মোয়াল্লেমকে সৌদি সরকারের (IBAN) এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। এজেন্টরা এ টাকা উঠাতে পারেন না। বাকি কেবল খাওয়ার টাকা হজ এজেন্সির কাছে থাকে। এ কারণে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান যুক্তিযুক্ত নয়। জরিমানার টাকা প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে প্রায় ১৭ গুন বেশি। এ কারণে এ ধারা ও উপধারাগুলো রহিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ধারা ১৬ জরিমানার টাকা আদায়, উপধারা (১) ও (২) জামানতের চেয়ে বেশি জরিমানা ধার্য করা ও আদায়ে Public Demands Recovery Act, 1913 কার্যকর করা হলে হজ ও ওমরাহ এজেন্টরা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে অভিযোগের কারণে ব্যবসার মূলধনের বাইরে নিজস্ব জমি, বাড়ি, ভিটা ক্রোক করে ব্যবসা রক্ষা করা মোটেও সম্ভব নয়। বহু এজেন্সির মালিকের এত বেশি জরিমানা প্রদানের ক্ষমতা নেই। Public Demands Recovery Act, 1913 প্রয়োগ করে অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে সরকারি পাওনা হিসেবে জরিমানার অর্থ আদায়যোগ্য হবে। এ ধারাটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে।

তৃতীয়ত, ১৭ নম্বর ধারা আপিল আবেদন। আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা কখনো বিচার বিভাগের উপরে হতে পারে না। অতএব ১৭ (৩) কোনো ব্যক্তি বা এজেন্সির বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক জরিমানা বা শাস্তি আরোপিত হলে কোনো আদালতে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে না। এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী। আমাদের দাবি এই ধারা ও উপধারাগুলো বাতিল করতে হবে।

চতুর্থত, ১৮ নম্বর ধারায় ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ। উপধারা (২) কোনো হজ বা ওমরাহ এজেন্সির অংশীদার, পরিচালক বা অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হলে একই বিষয়ে এ আইনের অধীনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোনো বাধা থাকবে না। আমাদের দাবি একটি অপরাধের জন্য দু‘বার বিচার বা জরিমানা করা অযৌক্তিক। এই অযৌক্তিক ধারা ও উপধারা বাতিল করতে হবে।

পঞ্চমত, আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর হাজীদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড, সেবার দায়িত্ব রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়, মহাসাসা, সৌদি সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত মোয়াল্লেম অফিসের উপর বর্তায়। কেবলমাত্র খাওয়া ও বাড়ি এজেন্টগণ দেখাশোনা করবেন। যদি কোনো এজেন্ট হাজীদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর বাড়ি না পান তাহলে রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই ওই লাইসেন্স বাতিল করেন। সৌদি আরবে হাজীদের খাবার না পেলে বাংলাদেশের সরকারের কাউন্সিলর হজ সাথে সাথে ওই এজেন্সির বিচারের ব্যবস্থা করেন। তাহলে আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ এক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই। এই ধারাটি বাদ দিতে হবে। হজযাত্রীদের নিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে যদি কোনো এজেন্ট হজযাত্রীর সাথে প্রতারণা বা অনিয়ম করে তাহলে বাংলাদেশে তার বিচার হবে।

Development by: webnewsdesign.com