ঢাবিতে ভর্তির পর থেকেই শারমিনের দিন কাটছে চরম দুশ্চিন্তায়

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ | ৯:২৪ অপরাহ্ণ

ঢাবিতে ভর্তির পর থেকেই শারমিনের দিন কাটছে চরম দুশ্চিন্তায়
apps

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার রতিয়ারকোনা গ্রামের কৃষক মো. মিজানুল হক নাজমুল ও গৃহিনী নাছিমা আক্তারের মেয়ে মেধাবী ছাত্রী শারমিন সুলতানা। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন শারমিন। তবে তিনি অর্থাভাবে কোনো প্রকার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং না করেই মেধাতালিকায় ১০৪তম স্থান দখল করে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হয়ে এলাকার সকলের মাঝেই তাক লাগিয়ে দেন।

শারমিনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করলেও আর্থিক অনটনের কারণে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করার সাহস পায়নি তার পরিবার। ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন শারমিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই শারমিনের দিন কাটছে চরম দুশ্চিন্তায়। সে জানে না, কিভাবে তার লেখাপড়ার খরচ যোগাবে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম দরিদ্র বাবা সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবে নাকি তার হাতে লেখাপড়ার খরচ তুলে দিবে, এনিয়ে শারমিনের স্বপ্ন ¤øান হতে চলেছে। তবে শারমিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক।
মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার সরকার বলেন, আমাদের কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও ভর্তি পর তার শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বলে আমার কাছে খবর আসে। পরে আমি আমার কলিগদের নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে শারমিনের পড়ালেখার খরচ প্রাথমিকভাবে চালানোর জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছি। তা শিগগিরই শারমিনের হাতে তুলে দেব।

শারমিনের সহপাঠীরা জানান, যেখানে দেশের বহু বাবা-মা তাদের সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেও বিফল হয়, সেখানে এমন দুর্দান্ত ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েও শারমিনের দিন কাটছে লেখাপড়ার খরচ চালানোর দুঃশ্চিন্তায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শারমিনের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে তারা অর্থ সহায়তা চাইবেন বলেও জানান।

শারমিনের বাবা মো. মিজানুল হক নাজমুল বলেন, আল্লাহ আমার মতো গরিবের ঘরে এমন এক রত্ন দিয়েছেন। যার ভরণপোষণ করার মতো সামর্থও আমার নাই। শারমিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি, কিন্তু তার লেখাপড়ার খরচ নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছি।

শারমিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, বন্ধুদের অনেকেই যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য ময়মনসিংহ-ঢাকার মতো বড় শহরে পাড়ি জমায়, অর্থাভাবের কারণে শারমিন পড়ে রয়েছিল তার বাবার ছোট্ট কুটিরেই। বিষয়টি তার মনে প্রভাব ফেললেও তিনি দমে যাননি। বরং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিজের ঘরে বসে একা একাই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে ১০৪তম স্থান দখল করে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

শারমিন আরো জানান, সমাজের উদার, স্বচ্ছল এবং বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতা পেলে লেখাপড়া শেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের একজন সৎ কর্মকর্তা হয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান শারমিন।

শারমিন সম্পর্কে মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন চৌধুরী জানান, শারমিন অসাধারণ মেধাবী একজন ছাত্রী। সে আমাদের কলেজের গৌরব। সকলের সহযোগিতা পেলে শারমিন একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। দারিদ্রতা যেন শারমিনের সম্ভাবনাময় জীবনে কোনো আঘাত হানতে না পারে, তাই আমাদের সকলের উচিৎ তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা।

শারমিনের বাবা মো. মিজানুল হক নাজমুল তার মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যৌথ সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর: ৩৫১২১০১০০০১১৬, (শারমিন ও তার বাবার নামে খোলা হিসাব) সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মোহনগঞ্জ শাখা, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং বিকাশ নম্বর: ০১৭০৭০৫৫০৪৮-এর মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য সমাজের হৃদয়বান মানুষদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

Development by: webnewsdesign.com